ব্রয়লারেও কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: মো. ফরিদ কাজ করেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। বাচ্চার জন্ম দিন পালন করবেন। এসেছেন মাংস কিনতে গরুর মাংসের দাম ৭০০ টাকা কেজি। একারণে এসছেন ব্রয়লার মুরগি কিনতে । এসে দেখন প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা। উপায়ন্ত না পেয়ে করছেন বাজেট কাঁট ছাঁট। যেখানে ১০ কেজি কিনতেন সেখানে কিনেছেন ৬ কেজি ব্রয়লার মুরগি।

তিনি বলেন, আমি মধ্য বিত্ত মানুষ। পরিবারের আবদার মিটাতে ছোট অনুষ্ঠান করছি। হিসাব অনুযায়ী, ১০ কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে ১৫০০ টাকা লাগার কথা থাকলেও ৬ কোজি কিনতে হয়েছে ১২৬০ টাকায়।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগি কিনেছি ১৬০ টাকায়। আর আজ চাচ্ছে ২০০-২১০ টাকা। মরিচ-পেয়াজসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। ডিমের দাম ওনাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

নিজের ক্ষোভ আর হতাশা নিয়ে বলেন, আমাদের আয় বাড়ে না। বাজারের অবস্থার সঙ্গে আমার আয়ের কোনো মিল নেই। আমরা সাধারণ মানুষরা কোথায় যাব? সরকারি চাকরিজীবীদের সমস্যা নেই।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমান দাম ২০০ টাকা। শুধু ব্রয়লার নয়, বেড়েছে পাকিস্তানি কক মুরগির দামও। গত সপ্তাহেও পাকিস্তানি ককের দাম ছিল ২৪৫-২৫০ টাকার মধ্যেই। আজ বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৭৫ টাকায়।

সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। মধ্যবিত্তের জন্য কোনো জায়গা থাকছে না। নিম্নবিত্তরা আরও নিচে ধাবিত হচ্ছেন। সবকিছু ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।

বউ বাজারের পাশেই একটি হোটেল রয়েছে খোকন শেখের। মুরগি কিনতে এসে তিনি অবাক। বাড়তি দাম শুনে গড় গড় করে বলছিলেন, ‘ব্যবসা বুঝি ছাড়তে হবে’।

নিজের হতাশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ ব্রয়লার ২০০, কক ২৭০/২৮০ টাকা কেজি। আগে যখন ১৫০ টাকায় ব্রয়লার কিনেও হোটেলে পোষাতো না। এখন কীভাবে পোষাবে? লাভ কী থাকবে? কেজিতেই তো ৪০ টাকা নাই। ব্যবসা-বাণিজ্য শেষ। পথে নামতে হবে এমন দশা। হয় আমাকে হোটেল ব্যবসা ছাড়তে হবে, নয়তো সিস্টেমে চলতে হবে।

স্ত্রীকে নিয়ে মাংসের দোকানে ঘুরছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আলাউদ্দিন। গরুর মাংসের দোকান ঘুরে মুরগির মাংসের দোকানে দাঁড়িয়েও ভাবছেন।

তিনি বলেন, বাসায় মেহমান এসেছে। এক কেজি গরুর মাংস কিনতে গেলে ৭০০ টাকা লাগে। সেটা তো আর কিনতে পারব না। তাই ব্রয়লার কিনতে এসেছি। কিন্তু দেখেন, ব্রয়লারেও আগুন লেগেছে! ২০০ টাকা কেজি। কেজিতে ৪০/৫০ টাকা বেড়েছে। আমরা গরিব মানুষ, ন্যায্যমূল্যে কিছুই পাচ্ছি না। সবকিছুর দাম বাড়তি। আমার ১৬ হাজারের চাকরিতে অসহায় লাগছে।

মুরগি ব্যবসায়ী কবির বলেন, ভাই দিন শেষে আমাকেও বাজার করে খেতে হয়। বাড়তি দাম কইতে আমারও খুব খারাপ লাগতাছে। এক সপ্তাহ আগে চাইলাম ১৫০ টাকা কেজি, আজ সেই ব্রয়লার ২০০-২১০ টাকা। আমরা সবাই জিম্মি। ন্যায্যমূল্যটা আমরা কেউ পাইতেছি না। কেউ দেখার নাই। সাধারণ মানুষের ভাষা নাই, গরিবরা মরতাছে।