স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরির আহ্বান

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে একটি ভেজালমুক্ত ও ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অবহিতকরণ ও বাস্তবায়ন বিষয়ক এক সেমিনারে মূখ্য আলোচক হিসেবে বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সালে সংসদে পাস হয়। ২০১০ সাল থেকে অধিদপ্তরের কার্যক্রম শুরু হয়। আমরা ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। এ পথ পরিক্রমায় আমরা সকল ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছি। কিন্তু ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে। বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ শিশু খাদ্য ও কসমেটিকস পাওয়া যাচ্ছে। সেবার ক্ষেত্রে ভোক্তাগণ প্রতারিত হচ্ছে। ঈদের সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে বাচ্চাদের ইউনিফর্ম স্কুল থেকে কিনতে হয় যা অনেক সময় অত্যন্ত নিম্নমানের হয়। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিনের খাবারের মানও অত্যন্ত খারাপ, দামও বেশি নেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এ সকল বিষয়গুলোতে সচেতন না হব আমরা প্রতারিত হব। এ সকল কারণে অধিদপ্তর পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রত্যেক বিভাগ ও জেলায় কার্যক্রম চলমান আছে।

তিনি বলেন, খোলা সয়াবিন তেল বিক্রয় বন্ধে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। লোডশেডিং এর সময় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসায়ীরা ইলেকট্রিক পণ্য সামগ্রীর দাম অযৌক্তিক ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পেট্রোল পাম্পে অনিয়ম বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। জনবলের সংকটের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে নিজেদের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা একান্ত কাম্য।

ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ ডব্লিউ এম আব্দুল হক।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালকবৃন্দ, প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালকবৃন্দ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান।

সেমিনারের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তার। তিনি স্বাগত বক্তব্যে সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত সকল অতিথির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এরপর অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কিত একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সেমিনারে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তিনি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে উপস্থিত সকলকে বিস্তারিত বর্ণনা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও সংরক্ষণ করে স্বপ্নের দেশ গড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সবাই সচেতন হলে অধিদপ্তরে অভিযোগের পরিমাণ কমে যাবে। অধিদপ্তর যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে একটি সেমিনার আয়োজন করায় আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। অধিদপ্তর যখন অভিযান পরিচালনা করে, দোষীদের শাস্তি দেয় তখন অত্যন্ত ভালো লাগে।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ ডব্লিউ এম আব্দুল হক বলেন, বাজারে ভেজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে যা নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, আজকে আমরা সত্যিই আনন্দিত যে ভোক্তা অধিদপ্তর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে। অধিদপ্তর সুন্দর ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যা নিয়ে আমরা গর্বিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

তিনি বলেন, পূর্বে এত ভেজালের প্রচলন ছিল না। আজকের বাজার ভেজালে ভরপুর। পণ্যের মোড়কে লেবেল ব্যবহার করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা এখানে এসেছি তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে। ভোক্তা-অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধ করতেই আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নৈতিকতার সঙ্গে যেন আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি সে জন্য আমরা সদা সচেষ্ট আছি।

সেমিনারের শেষ পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

-এসআর