‘ভোক্তা-অধিকার আইনের আধুনিকায়ন প্রয়োজন’

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট : ভোক্তা অধিকার আইনের আধুনিকায়ন করাসহ এর ক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

কিরণ বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করছে। প্রচলিত ভোক্তা আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা ও সুশাসনের অভাবে তারা বাজারকে আরও বেশি অস্থিতিশীল করে তুলছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে উৎসবের সময় পণ্যের দামে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে মুনাফালোভী, সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন উৎসবের সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। আইন দিয়ে এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ করা খুবই কঠিন। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানবিক মূল্যবোধ, সুশাসন, নৈতিকতা, বাণিজ্যিক কূটনীতিসহ আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর অত্যন্ত সাহসিকতা ও সততার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। খেয়াল রাখতে হবে ভোক্তা-অধিকার যাতে ব্যবসায়ীদের প্রতিপক্ষ না হয়ে যায়। মোবাইল কোর্টের নামে কোনো অপ্রয়োজনীয় হয়রানী যাতে না হয়। তাই সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে সচেতনতার মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার আদায়ে সামাজিক জাগরণ তৈরি করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, র‍্যাব, পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যাবে না। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ১০ দফা সুপারিশ করেন। সুপারিশগুলো হলো

১. দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রদান করা। একইসঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি প্রদান করা।

২. ভোক্তা-অধিকার আইনকে আরও আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করে অধিদপ্তরকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা।

৩. মজুতদারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা।

৪. সকল সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে বাজারে দ্রব্যমূল্য পরিবীক্ষণ করা।

৫. ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সময় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত রাখার বিষয়ে নিশ্চিত করা।

৬. অনলাইনে শুনানির মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা।

৭. ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগী, ধান, চালসহ ভোগ্য পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর নামের তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তৈরি করে দৃশ্যমান শান্তির ব্যবস্থা করা।

৮. পণ্যের নিরাপদ সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা।

৯. ব্যবসায়ীদের জন্য ভোক্তা-অধিকার বিষয়ক অরিয়েন্টেশন কোর্স চালু করা এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ কোর্সে ভোক্তা-অধিকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা।

১০. ভোক্তা-অধিকার আইনের ব্যাপক প্রচার প্রচারণাসহ সিন্ডিকেট কালোবাজারির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির শান্তি টিভিসি, বিলবোর্ডসহ বড় বড় বাজারগুলোর সামনে প্রদর্শন করা।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি যৌথভাবে এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে। এ ছায়া সংসদে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ের আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করবে।

‘শুধু আইন দিয়ে ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়’ শীর্ষক ছায়া সংসদের উদ্বোধনী প্রতিযোগিতায় প্রস্তাবের পক্ষে ইডেন মহিলা কলেজ এবং বিপক্ষে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করেন।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

প্রতিযোগিতায় বিচারক রয়েছেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা প্রমুখ।

-এসআর