জেলা ও উপজেলায় দেখা দিচ্ছে অক্সিজেন সংকট

দেশে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত। কোনো কিছুতেই এ মহামারির রাশ টানা যাচ্ছে না। আগের রেকর্ড ভেঙে হচ্ছে নতুন রেকর্ড। দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে একদিনে সর্বাধিক ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি চারজনে একজনের বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। টানা ৫ দিন ধরে মৃতের সংখ্যা একশর ওপরে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৮৩০১ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এদিকে সাতক্ষীরা ও ফেনীর সোনাগাজীতে অক্সিজেন সংকটে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে শুধু সাতক্ষীরাতেই মারা গেছেন আটজন।


সংক্রমণ বৃদ্ধির মুখে জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে যথারীতি বাড়ছে রোগীর চাপ। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসার পাশাপাশি অক্সিজেন সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে খুলনা, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, ফেনীসহ অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে অক্সিজেনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বরিশালে ৪৭ হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৮টিতে রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেন্টার। গেল ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৬ জন মারা গেছেন। রাজশাহী জেলার হাসপাতালগুলোতেও নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই। চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো-এখানে অক্সিজেন সংকট নেই। এদিকে দূষণের কারণে বন্ধ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব। ফলে সেখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে না।


দেশে সোমবার ১১৫ জন ও রোববার ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সবমিলিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৬। শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯। বুধবার দিন দেশে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৮২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে, পরীক্ষা কম হওয়ায় সংক্রমণ কিছুটা কমলেও বেড়েছে শনাক্তের হার। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। আগের দিন এ হার ছিল ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। সরকারি হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ৬৬৩ জন সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯১৩ জন। 
সীমান্তবর্তী জেলায় ভয়াবহ থাবা বসিয়েছে করোনা। বিশেষ করে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলায় এটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। খুলনা বিভাগে একদিনে রেকর্ড ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজধানী ও আশপাশের জেলাগুলোতে সংক্রমণের গতি ঊর্ধ্বমুখী। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। বেশির ভাগ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় (মহানগরসহ) শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। রাজবাড়ীতে শনাক্তের হার ৫৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। লালমনিরহাটে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৭৬ শতাংশ। নড়াইলে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৭১ দশমিক ৪২ শতাংশ। 
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৫৬৬টি ল্যাবে ৩২ হাজার ৫৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮২টি নমুনা। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক শূন্য ৮ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। মৃতদের মধ্যে ১০৯ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৩ জন বেসরকারি হাসপাতালে ও ১১ জন বাড়িতে মারা যান।