বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে প্লাস্টিক বর্জন বাধ্যতামূলক

প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে আমরা অনেকেই কমবেশি চিন্তিত। ‘প্লাস্টিক বর্জন করুন’ এই স্লোগানও বেশ পরিচিত। কিন্তু প্রতি দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের জীবন জুড়ে থাকা প্লাস্টিক আমরা কেন বা কী ভাবে বর্জন করব, এটা একটা বড় প্রশ্ন ।

প্লাস্টিকের বহু সুবিধা থাকলেও সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, এটি ‘বায়োডিগ্রেডেবল’ নয় অর্থাৎ প্রকৃতিতে মিশে যায় না। পৃথিবীতে প্রথম তৈরি প্লাস্টিকটিও আজও ধ্বংস হয়নি। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত প্লাস্টিক নির্ভরতার কারণে প্রতি বছর তৈরি বর্জ্য ৫.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন ছাড়িয়ে চলেছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সমীক্ষা অনুযায়ী, এ ভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সালে সমুদ্রে মাছের থেকে প্লাস্টিক বেশি হবে। আর এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের বিষময় ফল আমাদেরই ভুগতে হবে।

আসলে প্লাস্টিক হল বেশ কিছু যৌগের পলিমার রূপ। এই যৌগগুলি মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া তৈরি করে। প্লাস্টিকের বোতল বা ডায়াপারে বহুল ব্যবহৃত বিসফেনল ‘এ’, থ্যালেট প্রজননতন্ত্রের ক্ষতি করে। প্লাস্টিকের কাপে বা অন্য পাত্রে গরম পানীয় বা খাবার খেলে তার থেকে যে ডাইঅক্সিন শরীরে ঢোকে তা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমিয়ে দেয়, মহিলাদের বন্ধ্যত্ব ঘটায়। এ ছাড়াও ‘এন্ডোক্রিন ডিজ়রাপটার’ রাসায়নিকগুলি দেহের হরমোনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ।

পশুপাখি বা মাছ বহু সময়েই খাবার ভেবে বা খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলে। তার ফলে তাদের মৃত্যুর কথা প্রায়ই খবরে উঠে আসছে। আবার তাদের থেকেও খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকছে প্লাস্টিকের বিষ।

বিপদ আসে অন্য দিক থেকেও। নর্দমা বা অন্য জমা জলে আটকে থাকা প্লাস্টিকে বিভিন্ন রোগজীবাণু বহনকারী কীটপতঙ্গ, মশা-মাছির জন্ম ও বংশবিস্তার হয়। তা থেকে ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, টাইফয়েড, কলেরা, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি ইত্যাদি রোগের সংক্রমণ হয়। বহু জায়গায় এই বর্জ্যের পরিমাণ কমাতে পুড়িয়ে ফেলার অভ্যাসও আছে যা একই সঙ্গে বিপজ্জনক। কারণ তা মারাত্মক বায়ুদূষণ করে যাতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি এমনকি ক্যানসার অবধি হতে পারে। আর তা বেআইনিও বটে। এই বর্জ্য প্লাস্টিকের কারণে তৈরি মিথেন, ইথিলিনের মতো ‘গ্রিনহাউস গ্যাস’ উষ্ণায়ণে প্রত্যক্ষ কুপ্রভাব ফেলে।

প্লাস্টিক থেকে অল্প বৃষ্টিতে জল জমা, বন্যা, তার থেকে জল, মাটি, বাতাসের দূষণ এ সবও ঘটে। জমিতে বা মাটিতে জমে থাকে বলে চাষের আনাজ, গাছের ক্ষতি হয়, মাটির নীচে জল ঢুকতে বাধা পায়। জলসঙ্কটের তা একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেশজুড়ে জলাভাবের যে সাম্প্রতিক চিত্র তাতে এই বিষয়টি ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ।

নিজেদের আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে প্লাস্টিক দূষণ কমাতেই হবে। অন্যথায় প্রানীকুলের জন্য বিপদসংকুল পরিবেশ অপেক্ষা করবে।