প্রস্তুকারক প্রতিষ্ঠান এবং ভোক্তা বনাম বাংলাদেশ

রাস্তা-ঘাটে এদিক সেদিক তাকালে প্রদর্শিত চিত্রের মত হরহামেশাই এমন খালি বোতল ও মোড়ক পড়ে থাকার দৃশ্য দেখা যায়। পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে বা ভোক্তাদেরকে আকৃষ্ট করতে এমন বাহারি রঙে-ঢঙে অপচনশীল উপাদানে তৈরী বোতল বা মোড়কের মাধ্যমে, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তার পণ্যের বাজারজাত করে থাকেন। আর বাজার থেকে আমরা ভোক্তাগণ স্বহস্তে সেই পণ্য ক্রয় করে, ভোগ বা ব্যবহার পরবর্তী সময়ে বোতল বা মোড়কটি যত্রতত্র ছুড়ে ফেলি। যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা সেই বাহারি রঙের বোতল বা মোড়কগুলো তখন শুধুই ময়লা। এগুলো যেমন বাংলার অপরুপ সৌন্দর্যকে নোংরা রূপে ফুটিয়ে তুলছে, তেমনি মোড়কের উপাদান অপচনশীল হওয়ায় তা পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে।

একদিকে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান লোভাতুর আনন্দ পায় তার পণ্যের মোড়কটি রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকার দৃশ্য দেখে। কারণ নামী-দামী ব্রান্ডের কেউ কেউ হয়তো মনে করেন “একটি পণ্য তখনই সর্বাধিক বিখ্যাত যখন ঐ পণ্যের মোড়ক রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়”। অপরদিকে ভোক্তাগণ ভোগ বা ব্যবহার পরবর্তীতে প্যাকেটি যত্রতত্র ছুড়ে ফেলে পায় অবাধ স্বাধীনতার পৈশাচিক আনন্দ। দিনশেষে শুধু নোংরা হচ্ছে বাংলাদেশের রূপ, আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের পরিবেশ। ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবেশ আর নোংরা রূপের দ্বায় যেন শুধুই বাংলাদেশের।

নোংরা এবং ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবেশের জন্য দায়ী ভোক্তাগণ বা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। অনেক ক্ষেত্রেই প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গলা উচিয়ে বলেন সকল দোষ ভোক্তাগণের। কারণ ভোক্তাগণই এই মোড়ক বা বোতল যত্রতত্র ছুড়ে ফেলেন। অপরদিকে ভোক্তাগণ বলেন ডাস্টবিন তো হাতের কাছে নেই তাই তো যত্রতত্র ফেলতে হয়। সবাই যেন একে অন্যের প্রতি দোষারোপি প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। দায়িত্বহীন ও দোষারোপী মনোভাবের এই প্রতিযোগিতায় কেবল নিঃশব্দে সকল দায়ভার বয়ে বেড়ায় ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তে ও দু লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমে অর্জিত এই বাংলাদেশ। অথচ এই দেশে বসবাস করেই আমরা কখনও ভোক্তা আবার কখনও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের সাড়িতে দাঁড়িয়ে খেলে যাই বাংলাদেশের সাথেই।

তাই ভোক্তা কিংবা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান উভয়েরই উচিত একে অন্যের প্রতি দোষারোপি প্রতিযোগিতায় না দাঁড়িয়ে দায়িত্বশীল আচরন করা। এর জন্য ভোক্তাদের ও যেমন সচেতন হওয়া উচিত ঠিক তেমনি ভাবে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তার বিজ্ঞাপন গুলোর পাশাপাশি যদি সচেতনতা মূলক বানী প্রচার করে যেটি ভোক্তার চোখ না এড়িয়ে যায় তাহলে কার্যকরী সমাধান পাওয়া যাবে। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান যদি বোতল বা মোড়কের গায়ে বড় বড় অক্ষরে লিখে দেন “ব্যাবহারের পরে খালি মোড়কটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন” তাহলে অন্তত শিক্ষিত ভোক্তাগণ নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সে নির্দেশিকা মেনে নিয়ে মোড়ক বা বোতলটি নির্দিষ্ট স্থানেই ফেলবেন।

এভাবেই হয়ত পরিবেশের উপর আমাদের এই ক্ষতিকর প্রভাব দূর হবে এবং সুন্দর দেশ গড়ে উঠবে।

ছবিঃ সংগৃহীত