রোজার আগেই নিয়ন্ত্রণহীন রাজশাহীর বাজার

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রাজশাহীর খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে। এই আলু আড়তে বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৭ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা কেজি। একই পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। শুধু আলু-পেঁয়াজ না, প্রতিটি পণ্যর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারে। রোজার আগে আবারও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে নিত্যপণ্যের দাম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের কড়াকড়িতে পাইকারিতে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামেই বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাইকারি বিক্রেতাদের। খুচরা বাজার একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তেল ও চিনির দাম খুচরায় কমানো হয়নি। যে যার মতো দামে বিক্রি করছে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি ও মাংস।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, কতো লাভ করা যাবে সে ব্যাপারে সরকার কিছু বলেনি। তাই একটা লাভ ধরে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। লাভের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিলে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারবো।

মহানগরীর সাহেববাজারের মাস্টারপাড়ায় আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চাল থেকে শুরু করে সবজির পণ্য আড়ত, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয়। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে জানতে চাইলে আড়তদার খলিলুল রহমান বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ শেষ হয়ে আসছে। তাই কয়েক দিন থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। তিন দিন আগে আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা কেজি। সেই পেঁয়াজ শুক্রবার ১১০-১১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। মোকাম থেকে সব খরচ হিসাব করে দাম নির্ধারণ করে দেয়। আমরা সেই দামে বিক্রি করছি।

দাম কি এভাবে বাড়তেই থাকবে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর বাড়বে না পেঁয়াজের দাম। মোকাম থেকে বলা হচ্ছে। কারণ হালি পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। কয়েক দিনের মধ্যে কমতে শুরু করবে। রমজানে ৪০-৫০ টাকায় নেমে আসবে।

পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ায় খুচরা বিক্রেতারা বেশ বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। একই বাজারের খুচরা বিক্রেতা আবদুল হালিম বলেন, ১২০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

পেঁয়াজের মতো আড়তে কমলেও ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে আলু। আড়তদার মো. রাসেল বলেন, আলুর দাম কমেছে। ২৩-২৪ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি আমরা। একই আলু একটু দূরে খুচরা বাজারে ৩০-৩২ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, আলুর দাম কমেছে। আগে ৩৫ টাকা বিক্রি করলেও বর্তমানে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।

একই ভাবে দাম বাড়ছে সয়াবিন তেল, ডিম, চিনি, মাংস, মাছ ও চালের। মহানগরীর বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৪৫ টাকায়। আর পরিবেশকরা সরবরাহ করছেন ৭৯০ টাকাতে। খুচরাতে চালের দাম বেশিতেই বিক্রি হচ্ছে। ভোটের পর যে দামে বিক্রি হচ্ছিল এখন সেই দামেই হচ্ছে।

এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে মাংসের দামও বেড়ে গেছে। মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজি, সোনালী ৩০০-৩১০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায় আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।

মাছের বাজারেও একই অবস্থা। রুই, কাতলা আকারভেদে ২৬০-৫০০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০-১০৫০ টাকা, শিং ৫০০-৬৫০ টাকা, মলা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, বাইন ৪০০-৬০০ টাকা, পাঙাশ ২০০-২৫০, তেলাপিয়া ২২০-২৫০, কই ২৫০-৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৪৫০-৭০০ টাকা, মাগুর ৪০০-৬০০ টাকা ও ইলিশ মাছ আকারভেদে ৯০০-১৬০০ টাকা কেজি। তবে বড় ইলিশ মাছের দাম আরও বেশি, ১৮০০-২০০০ টাকা কেজি বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান।

শীতের সবজির ভরা মৌসুম হওয়ায় আগের চেয়ে কমেছে সবজির দাম। ফুলকপি ৩৫-৪০ টাকা কেজি, বেগুন ৬০-৭০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ৬০-৮০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, শাকের আঁটি ১০-১৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সজনার ডাটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা, শশা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মূলা ২০ টাকা ও প্রতিটি ব্রকলি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। প্রতিহালি কলা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা, প্রতি কেজি সিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, টমেটো বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, প্রতিকেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপেঁ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে।

আদা ও রসুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। এছাড়া মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা হালি ও সাদা ডিম ৪৪ টাকা। হাসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা হালি।