ব্যাংকিং চ্যানেলে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৯১ শতাংশ

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: দেশের আর্থিকখাত থেকে টাকা পাচার বা সন্দেহজনক লেনদেন কোনো ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে ব্যাংকখাত থেকে ৯১ শতাংশ টাকা পাচার করা হয়েছে। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় ৬০ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে।

বিএফআইইউ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশের আর্থিকখাত থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ব্যাংকিং খাতে ১২ হাজার ৮০৯টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে গেল অর্থবছরে। যা আগের বছরে ছিলে সাত হাজার ৯৯৯টি। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ১২১টি। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছে ১০৬টি। প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিট্যান্সে ৯০০ ও অন্যান্য উৎসে ২৭১টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে।

২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরের সন্দেহজনক লেনদেনের হিসাব করলে দেখা যায়, এ সময় সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ২৯৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বিএফআইইউ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটে ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেন প্রতিবেদন বা এসটিআর জমা হয়েছে। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল আট হাজার ৫৭১টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ২৮০টি।

বিএফআইইউএর প্রধান বলেন, ‘বিএফআইইউ তার কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এ বছরের প্রতিবেদনে পূর্বের বছরের ন্যায় বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি হুন্ডি, অবৈধ গেমিং/বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও ফরেক্স ট্রেডিং প্রতিরোধে বিএফআইইউ কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের বিষয়ে পৃথক অধ্যায় সংযোজন এবং একাধিক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসমূহ থেকে বিএফআইইউতে দাখিলকৃত বিভিন্ন রিপোর্টের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসমূহ বিএফআইইউ বরাবর সর্বমোট ১৪ হাজার ১০৬টি সন্দেহজনক লেনদেন/কার্যক্রম প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) দাখিল করেছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। এটি মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, বিএফআইইউএর কঠোর অবস্থান ও অপরাধের ধরণ পরিবর্তনের প্রতিফলন মর্মে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। সরকার কর্তৃক গৃহীত নানাবিধ অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে আর্থিক ব্যবস্থায় লেনদেন কার্যক্রম বেড়ে গিয়েছে এবং এর ফলে গত বছরের তুলনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে নগদ লেনদেন বিবরণীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মর্মে তিনি অবহিত করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, বিএফআইইউ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৩৩টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় প্রেরণ করে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।

এছাড়া, বিএফআইইউ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে এক হাজার ৭১টি তথ্য বিনিময় করেছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

বিগত অর্থবছরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারকরণের ফলে ‘Basel Anti Money Laundering (AML) Index-2023’ এ বাংলাদেশ পাঁচটি দেশকে পেছনে ফেলে র‌্যাংকিং এ বিগত বছরের ৪১ নম্বর দেশ হতে ৪৬ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন বলেন, দেশ থেকে একবার টাকা পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা খুব কঠিন। ফেরত আনতে অনেকগুলো পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে হয়। এছাড়া সব দেশের আইন-কানুন এক রকম না। তারপরও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এখন পর্যন্ত কত টাকা ফেরত আনতে সমর্থ হয়েছে বিএফআইইউ জানতে চাইলে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, সিঙ্গাপুর থেকে আরাফাত রহমান কোকোর ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার ফেরত আনা হয়েছে।

বিএফআইইউএর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাসে সভাপতিত্বে সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও বিএফআইইউ এর উপ-প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. সরোয়ার হোসেন, ডিপার্টমেন্ট অব কমিউনিকেশন্স এন্ড পাবলিকেশন্সের পরিচালক, বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা ও বিএফআইইউ এর পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বিএফআইইউ প্রতিনিধি বার্ষিক প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন। এতে বিএফআইইউ এর বিগত অর্থবছরের বিভিন্ন কার্যক্রমের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

সভার শেষ পর্যায়ে উপস্থিত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।