‘এবারের বাণিজ্যমেলায় প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না’

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: এবারের বাণিজ্যমেলায় ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আহসানুল ইসলাম (টিটু)৷

শনিবার দুপুরে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন৷

ভোক্তা অধিদপ্তরের সবাইকে কড়া নির্দেশ দিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবারের মেলাতে যাতে কোনোভাবে মেলার দর্শণার্থী বা ভোক্তারা প্রতারিত না হয়, এ জন্য অভিযোগ বক্স ও হেল্পডেক্স রাখা হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে এবারের মেলার মূল লক্ষ্য রপ্তানিকে বহুমুখী করে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মেলার মূল উদ্দেশ্য গার্মেন্টেস খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশীয় পণ্যের রপ্তানি বহুমুখী করতে পারি। এখানে আন্তর্জাতিক স্টলের থেকে দেশীয় স্টলগুলো যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাণিজ্য করতে পারবে, রপ্তানি করতে পারবে এটাই আমাদের প্রধান ফোকাস।

আহসানুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রচুর ইলেকট্রনিকস পণ্য মেলাতে অংশ নিয়েছে। এ খাত অনেক এগিয়ে গেছে। আগামীতে আমরা চেষ্টা করবো আমাদের লোকাল যে শিল্পগুলো আছে হস্তশিল্প, ফার্নিচার, হিমায়িত খাদ্য পণ্য ফোকাস করা হবে। এছাড়াও চামড়া, পাট শিল্পকে গার্মেন্টসের মতো বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে বলে প্রধানমন্ত্রী, সেটা একটা প্রতিফলন আপনারা মেলাতে দেখতে পারবেন।

তিনি বলেন, এবার মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ফার্মগেট থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে উত্তরা থেকে যারা মেলায় আসবে তারা মেট্রোরেলে এসে ফার্মগেট থেকে বাসে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সোজা মেলায় চলে আসতে পারেন সেই সুবিধা রাখা হয়েছে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যত বেশি দর্শণার্থী আসবে তত বেশি লোকাল শিল্প উৎসাহিত হবে। মিডিয়ার জন্য আলাদা মিডিয়া সেন্টার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য রপ্তানিকে বহুমুখী করার মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানো। গত ১৫ বছরে ৬ গুণ রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে পেরেছি। আমরা সেখানে বসে থাকতে চাই না। আমরা যদি পণ্যে বহুমুখীকরণ করতে পারি তাহলে আমাদের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে চাই। রপ্তানি বাড়াতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাড়াতে পারবো না। আমাদের দুইটা মূল লক্ষ্য লোকাল কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বাড়ানো। প্রধানমন্ত্রী যে পণ্যকে বর্ষপণ্য ঘোষণা করুক না কেন। আমরা সারা বছর সেটা নিয়ে কাজ করবো। আপনারা জানেন এবার প্রথম মেলায় ই- কর্মাস সেবা শুরু হয়েছে। সেটাকে আরও বেগবান করবো। যাতে সারাদেশের মানুষ এ সুবিধা পেতে পারেন।

এ মেলাকে কতটা আন্তর্জাতিক মেলা বলতে পারি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা বলার চেষ্টা করছি এ জন্য যে আমাদের লোকাল শিল্পগুলো যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে যাওয়ার একটা সুযোগ পায়। এখানে শুধু প্রদর্শনী হয় যে আমাদের কি কি আন্তর্জাতিক মানের পণ্য রয়েছে। আমরা বেশি উৎসাহিত করে আনছি না এ কারণে যে বিদেশিরা এক মাসের মেলাতে আসতে চায় না। আমাদের লক্ষ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ। আর পণ্যেগুলো বিদেশিদের দেখানোই উদ্দেশ্য।

আশপাশে প্রচুর অপরিকল্পিত দোকানপাট বসে, যেখান মানহীন পণ্য বসে, ফলে ভোক্তারা প্রতারণা শিকার হচ্ছেন। সেগুলো কীভাবে দেখবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম বলেন, এখানে পণ্যের বিষয় বলেছেন, আমি আজকে ইপিবি, ভোক্তা অধিদপ্তরের সবাইকে কড়া নির্দেশ দেব, যাতে কোনো ভাবে মেলার দর্শণার্থী বা ভোক্তারা যাতে প্রতারিত না হয়৷ এখানে ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার কোনো সুযোগ রাখবো না। এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। যদি মেলাতে কোনো মানহীন পণ্য থাকে সেটা মেলা প্রদর্শন বন্ধের ব্যবস্থা ভোক্তা অধিদপ্তর নেবে। আমি দুইটা বিষয় নিশ্চিত করতে চাই, আমাদের ভোক্তার কর্মকর্তারা প্রতিটা স্টলে যাবে, যাতে ভোক্তারা প্রতারিত না হয় সে ক্ষেত্রে শতভাগ চেষ্টা করবো। অভিযোগ থাকলে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজধানী থেকে এত দূরে মেলা আয়োজন সেখানে বিদেশিদের আনতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটা দেশের ট্রেড মিশনের কর্মকর্তারা রয়েছে। তারা কিন্তু মেলাতে আসেন। তবে এবার আমি ইপিবিকে অনুরোধ করবো তারা যখন আসবে তাদের একসঙ্গে নিয়ে আসতে বলবো। এছাড়া আমরা নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বসবো নিরাপত্তার জন্য। আমরা ধাপে ধাপে সব করবো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার মেলায়, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ ১৬ থেকে ১৮টি বিদেশি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এছাড়া একটি হেল্পডেক্স, অভিযোগ বুথ করে দেওয়া হবে। আর একটা বিষয় আগামীতে মেলায় কোনো ম্যানুফেকচারার বঞ্চিত হবে না। তাদের দেওয়ার পরও আমরা কমার্য়াশি স্টল বরাদ্দ দেব৷ মেলা আয়োজন করতে হলে সব কিছুর একটা সমন্বয়ের প্রয়োজন হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।