লোডশেডিংয়ে ক্ষতির শঙ্কা

এস এম রাজিব: তীব্র গরম আর কাঠফাটা রৌদ্রে অতিষ্ঠ রাজধানীসহ সারাদেশ। আর এর মধ্যেই জ্বালানির অস্থিরতা মোকাবেলায় বিভিন্ন পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। তবে এ পরিকল্পনায় ভোগান্তিতে পড়েছেন জনসাধারণ। এছাড়াও সরকারের এ পরিকল্পনায় ব্যবসায়িক ক্ষতির শঙ্কাও করছেন ক্ষুদ্র কল কারখানার মালিক-কর্মচারীরা।

তবে এ সঙ্কট সরকারকে বলে এসেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভূ-ত্বত্ত বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম।

এ সময়ে ক্ষুদ্র কারখানার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার শাহীন মেটাল ওয়ার্কশপের মালিক শাহিন সরদার বলেন, ‘করোনার সময়ে বিধিনিষেধের কারণে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। করোনার পরে একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে আবারও বিপদে পড়ে যেতে হবে।’

একই এলাকার মো. বাবু বলেন, ‘আমাদের মেটালের কাজে বিদ্যুৎ ছাড়া চলে না। কিন্তু সরকার যদি লোডশেডিংও দেয় আবার রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশও দেয়, তাহলে আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বো। এ নিয়মগুলো হয়তো দোকানদারদের জন্য ঠিক আছে কিন্তু কারখানার জন্য সমস্যা।’

পল্টন এলাকার কালার প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার মো. মিঠুন বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আমরা ক্ষতির মুখে পড়বো। আর এতে ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের সমস্যায় পড়তে হবে। আমাদের প্রিন্টিং প্রেসের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটা ঔষধ কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত।’

লোডশেডিং দিয়ে ভোগান্তি না বাড়িয়ে বিকল্প পন্থায় উত্তরণের উপায় ছিলো কী না- এমন প্রশ্নে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম ভোক্তাকণ্ঠকে বলেন, ‘হঠাৎ করে এই সঙ্কট আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে এই সঙ্কট তৈরি হয়ে সরকারকে জানান দিয়ে এসেছে। কিন্তু সরকার এটা মোকাবেলায় কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি। বরং অবহেলা করে গেছে। গ্যাস উত্তোলন (অভ্যন্তরীণ) বাড়ায়নি। আর এই সঙ্কট এতোটাই বড় যে শুধু লোডশেডিং দিয়ে এটা সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই এই সঙ্কট যে এতো তাড়াতাড়ি কেটে যাবে, সেটাও ভাবা যায় না।’

তিনি বলেন, ‘এটা অনেক দিন থাকবে এবং যতদিন জ্বালানির যোগান না আসবে, ততদিন এই সঙ্কট থাকবে। তবে জ্বালানির যোগান কিভাবে আসবে, কত দিনের মধ্যে আসবে, এ বিষয়ে কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। আবার রিসার্সেও (গবেষণা) যাওয়া হচ্ছে না।’

একদিকে লোডশেডিং, আবার রাত ৮টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ, সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র কারখানার ব্যবসায়ীরা ক্ষতির শঙ্কা করছেন। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত কী না- এমন প্রশ্নে ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, ক্ষুদ্র কলকারখানাগুলোর (শিল্প কারখানার আওতাভূক্ত নয় এমন) দিকে সরকারের নজর দেওয়া অবশ্যই উচিৎ। তাদের জন্য সময়সীমা বাড়ানো উচিৎ। এতো সমস্যার মধ্যে থাকলে তো তারা ক্ষতির মুখে পড়বে। কোভিডের কারণে দুই বছর ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। আবার যদি এই নিয়মের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে তাহলে তো সমস্যা।’

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. নিজাম উদ্দিন ভোক্তাকণ্ঠ কে বলেন, ‘সময় বাড়ানোর বিষয়ে আপাতত কোন সুযোগ নেই। সরকারের সিদ্ধান্ত সবাইকে মানতে হবে। তবে তারা (ব্যবসায়ীরা) যদি কোন সমস্যার বিষয়ে আবেদন করেন, তাহলে সেটা বিবেচনা করা হবে।’

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) থেকে এক সপ্তাহ জোনভিত্তিক লোডশেডিং করা হবে। তবে এতে যদি সাশ্রয় কম হয়, তাহলে আরও এক ঘণ্টা বাড়িয়ে দুই ঘন্টা করা হবে।

এছাড়াও, রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যার আওতায় রয়েছে ক্ষুদ্র কল কারখানাগুলোও।