৭ মাস পর এলএনজি এলো দেশে

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: অবশেষে স্পট মার্কেট (আর্ন্তজাতিক খোলা বাজার) থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হয়েছে। দীর্ঘ প্রায় সাত মাস পর গত সোমবার স্পট এলএনজির কার্গো দেশে এসেছে। এরপরই গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

৮৫০ কোটি টাকায় ৬২ হাজার টন এলএনজির কার্গোটি সরবরাহ করেছে টোটাল এনার্জি। এই কাগোর প্রতি এমএমবিটিইউ (মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) এলএনজির দাম পড়েছে ১৯ দশমিক ৭৪ মার্কিন ডলার।

আগামী দুই-এক সপ্তাহে আরেক কার্গো এলএনজি আসার কথা রয়েছে। যা সরবরাহ করবে জাপানের জেরা কোম্পানি। এ কার্গোর প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়বে ১৬ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার। এভাবে জুন পর্যন্ত মাসে স্পট মার্কেট থেকে মাসে দুই কার্গো এলএনজি কেনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সোমবার পেট্রোবাংলা ২৭৪ দশমিক ২৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া গেছে ৫৪ দশমিক ৭৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস। গত ১৭ মার্চ দেশে গ্যাসের সরবরাহ ছিল ২৬৬ দশমিক ৮৩ কোটি ঘনফুট, যার মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া যায় ৪৫ দশমিক ৬৭ কোটি ঘনফুট।

এক সময় আমদনি করা এলএনজি থেকে দিনে ৮৫ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ হতো। করোনা পরবর্তী চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে গত বছর আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বাড়তে থাকে। স্পট মার্কেটে যে এলএনজি বাংলাদেশ ১০-১২ ডলারে (প্রতি এমএমবিটিইউ) কিনতো, তা বেড়ে ৫০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।

দাম বৃদ্ধির কারণে লোকসান কমাতে সরকার গত জুলাই মাস থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা বন্ধ করে দেয়। ফলে দৈনিক গ্যাসের সরবরাহ ৪০-৪৫ কোটি ঘনফুট কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে সব খাতে। সিএনজি ও বাসা-বাড়িতে সরবরাহ কমিয়েও সরকার পরিস্থিতি সামলাতে পারেনি। বিদ্যুৎ ও শিল্পে গ্যাসের ঘাটতি চরমে পৌঁছায়।

সংকট মোকাবেলায় সরকার ঘোষণা দিয়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু করে। শিল্প মালিকরা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা চায়। এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে বার বার বৈঠক করে। চিঠিও দেয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী আদেশে গত ২৮ জানুয়ারি বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে রেকর্ড ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ায় সরকার। গ্যাসের বর্ধিত মূল্য দিয়ে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

দেশে গ্যাসের ঘাটতি মেটাতে ২০১৮ সাল থেকে সরকার এলএনজি আমদানি শুরু করে। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কাতারের রাস গ্যাস প্রথম এলএনজি কার্গো সরবরাহ করে। রাস গ্যাসের সঙ্গে ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ বছর মেয়াদী চুক্তি সই করে পেট্রোবাংলা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৭৩ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে রাস গ্যাস।

এছাড়াও, ২০১৮ সালের ০৬ মে ওমানের ওকিউি ট্রেডিংয়ের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদী চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। এই চুক্তির আওতায় প্রথম কার্গো আসে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭৬ কার্গো এলএনজি সরবরাহ করে ওমানের কোম্পানিটি।

স্পট মার্কেট থেকে সরাসরি এলএনজি আমদানি শুরু হয় ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৬টি কোম্পানির সঙ্গে পেট্রোবাংলার চুক্তি রয়েছে। স্পট মার্কেট থেকে এখন পর্যন্ত ২৯ কার্গো এলএনজি কিনেছে বাংলাদেশ।

দেশে বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট। তবে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ৩১০ কোটি ঘনফুট হলেও বিদ্যুৎ ও শিল্পখাতের চাহিদা যথাসম্ভব মেটানো যাবে। তবে সিএনজি ও আবাসিকে রেশনিং করতে হবে।