হাসপাতালের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন

অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই টর্চার সেলে নিয়ে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক পেটানো হয় তাকে। পরে মুখে কালি মেখে গলায় জুতার মালা পরিয়ে ঘুরানো হয় পুরো হাসপাতালে। এভাবেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রুপমের নেতৃত্বে কয়েকটি চক্র নির্যাতন চালায় অভিযোগকারীর ওপর।

সম্প্রতি এক কর্মচারীকে লাঞ্ছিতের ভিডিও ফাঁসের পর উঠে আসে চমকে ওঠার মতো তথ্য। চক্রগুলো করোনা মহামারির সময়েও হাসপাতালের ওষুধ, স্লিপ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।


হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সোহেল নামের এক কর্মচারীকে গলা চেপে ধরে চড়-থাপ্পড় মারছেন চট্টগ্রাম মেডিকেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুপম কান্তি। আরেক কর্মচারী আমজাদ পেছন থেকে ভুক্তভোগীর গলায় পরিয়ে দিচ্ছেন জুতার মালা। সঙ্গে রয়েছেন নেজাম ও সুজন নামের আরও দুইজন।


ঘটনাটি গত ২৬ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে মেডিকেলের কর্মচারীদের ক্যান্টিনের সামনে। মূলত হাসপাতালের পরিচালকের কাছে তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় এভাবেই লাঞ্ছিত করা হয় বলে দাবি সোহেলের।
নির্যাতনের শিকার মো. সোহেল জানান, তাদের অন্যায়, দুর্নীতি ও দালালদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে আমাকে মারধর করে তারা। পরে চতুর্থ শ্রেণির ক্যান্টিনে নিয়ে আমার গালায় মালা পরানোর চেষ্টা করে।


এর আগে সমিতির কার্যালয়ে ঢুকিয়ে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধরও করা হয় তাকে। কেউ প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয় বলে এটি সবার কাছে পরিচিত টর্চার সেল হিসেবে। রুপমের নেতৃত্বে চক্রটি মেডিকেলের পূর্ব গেটের সিটি ও একুশে ফার্মেসিসহ নানা ফার্মেসি থেকে রোগীদের বাধ্য করে বেশি দামে ওষুধ কিনতে। পছন্দের ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি ওষুধ বাণিজ্যসহ অনিয়ম কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত চক্রটি।


চমেক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, ওয়ার্ড মাস্টার রাজিব বাবুসহ কর্মচারী রুপমের নেতৃত্বে কয়েকটি চক্র এই নির্যাতন চালায়।


তবে কর্মচারীদের মারধর ও অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুপম কান্তি। তিনি জানান, সোহেলের শার্টের কলার ধরে নিয়ে তাকে একটু শাসন করেছি। ক্যান্টিনের ভেতরে পানি ছিল, তাই পা পিছলে পরে গিয়ে মুখে কালি লেগেছে।


এদিকে বিষয়টি তদন্ত কমিটি করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার কথা জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, এ ঘটনায় যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।