আইবিডি রোগে আক্রান্তদের অধিকাংশই তরুণ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
পরিপাকতন্ত্রে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগ ‘ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ’ বা ‘আইবিডি’। দেশে এই রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৬০ শতাংশই পুরুষ, এছাড়াও বাকি ৪০ শতাংশ নারী। এমনকি, রোগীদের প্রায় সবাই ২০-৪৫ বছর বয়সী। অর্থাৎ তরুণদের মধ্যে রোগটির প্রকোপ বেশি।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘আইবিডি এক্সপ্রিয়েন্স ইন বিএসএমএমইউ’ শীর্ষক এক সেমিনারের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে এসব তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও আইবিডি ফ্রি ট্রিটমেন্ট ক্লিনিকের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ।

তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউয়ের অন্যান্য চিকিৎসক ও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ২০১৭ সাল থেকে ক্লিনিকটি পরিচালনা করছি। পেটের প্রদাহজনিত রোগ বা আইবিডি বলতে দুটি আলাদা রোগ আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোনস ডিজিজকে বোঝায়। এই পাঁচ বছরে ৬১৭ জন রোগী নিবন্ধিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৯০ জন ক্রোনস ডিজিজ ও ৩২৭ জন আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগী রয়েছেন।

চঞ্চল কুমার ঘোষ বলেন, শহরের লোকজনের মধ্যে রোগটির প্রকোপ একটু বেশি হলেও গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যেই এ রোগের প্রবণতা কাছাকাছি। শ্রেণি বিবেচনায় গরিব ও ধনী রোগী সমান।

বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বলা হয়, আইবিডি রোগটি প্রধানত দুই ধরনের। তা হলো- আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোনস ডিজিস। আলসারেটিভ কোলাইটিস শুধুমাত্র বৃহদন্ত্রে হয়ে থাকে। আর ক্রোনস ডিজিস মুখ থেকে পায়ুপথ পর্যন্ত পরিপাকতন্ত্রের যেকোনো স্থানে হতে পারে। পেটে ব্যাথা, দীর্ঘদিন ধরে পাতলা পায়খানা, ওজন কমে যাওয়া ক্রোনস ডিজিজের প্রধান উপসর্গ। আর রক্তযুক্ত পাতলা পায়খানা হলো আলসারেটিভ কোলাইটিসের প্রধান উপসর্গ।

রোগটির কারণ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, দৈনন্দিন খাবারে শাকসবজি ও ফলমূলের স্বল্পতা, ফাস্টফুড গ্রহণ, অপরিষ্কার পরিবেশে খাবার গ্রহণ, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, শারীরিক পরিশ্রম কম করা, স্থূলতা, অল্প বয়সে অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার, ধূমপান আইবিডি রোগের প্রধান কারণ।

এই রোগ প্রধানত পাশ্চাত্যের হলেও বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর প্রাদুর্ভাব পূর্বের তুলনায় বেশি। এটি তরুণ ও মধ্য বয়সের রোগ হলেও শিশু ও বৃদ্ধ বয়সেও দেখা দিতে পারে।

বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগে ১৯৯০ সাল থেকে নিয়মিত আইবিডি রোগী দেখা হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার আইবিডি ক্লিনিকে ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এরফলে এ ধরনের রোগীদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আইবিডি রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া ছাড়াও দরিদ্র তহবিলের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, পেটের প্রদাহজনিত রোগ আইবিডি নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। দেশের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ এই রোগে ভুগছেন। পরিপাকতন্ত্রের এই রোগের মাধ্যমে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। আইবিডি বা পেটের প্রদাহজনিত এই রোগ নিরাময়যোগ্য না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আগেভাগে রোগটি চিহ্নিত হলে ক্যান্সার থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।

প্রসঙ্গত, আজ (১৯ মে) বিশ্ব আইবিডি দিবস আজ। পরিপাকতন্ত্রে মারাত্মক প্রদাহ সৃষ্টিকারী একটি রোগ ‘ইনফ্লেমেটরি বাওয়েল ডিজিজ’ বা ‘আইবিডি’। দিবসটির এ বছরের স্লোগান হচ্ছে— যেকোনো বয়সেই হতে পারে আইবিডি রোগ।