প্লাস্টিকের দূষণচক্রে নদী-মাছ-পরিবেশ

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের বিধান করেছিল। প্রায় দুই দশক পর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেশের পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ৮৭ শতাংশই পরিবেশবান্ধব সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে ফেলা হয় না। এই বর্জ্য পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে।

বিশ্বের নয়জন গবেষকের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর আগে ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা বলেছিল, সমুদ্রোপকূলে প্লাস্টিক বর্জ্য অব্যবস্থাপনার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ১০ম।

সাম্প্রতিক আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত গঙ্গা নদীর (ভারতের গঙ্গা, বাংলাদেশের পদ্মা ও মেঘনা) বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্লাস্টিকদূষণের নতুন নতুন উৎস তৈরি হচ্ছে। দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে জেলেদের ফেলে দেওয়া ও হারিয়ে যাওয়া নাইলনের জাল। একদিকে এসব জাল ও মাছ ধরার সামগ্রী নদীর পানিকে বিষিয়ে তুলছে, একই সঙ্গে তা মাছের পেটে যাচ্ছে। এই গবেষণা দলে ছিলেন ২২ জন পরিবেশবিজ্ঞানী।

দুটি প্রতিবেদনই প্রকাশিত হয়েছে গত নভেম্বরে সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট জার্নালে, পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির একটি গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। এতে গঙ্গা নদীর উৎস হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশে প্লাস্টিকদূষণ পরিস্থিতি দেখা হয়েছে।

এই কার্যক্রমে বাংলাদেশ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি সংস্থা ওয়াইল্ড টিম ও ইসাবেলা ফাউন্ডেশন অংশ নিয়েছে। আরও ছিল ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়, প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জুওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন।

গবেষণা দলের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পর এ নিয়ে কোনো সামগ্রিক গবেষণা হয়নি। বিভিন্ন খাত নিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু গবেষণা হয়েছে। তাই নীতিনির্ধারকেরা এর ক্ষতিকারক দিকগুলো ঠিকমতো বুঝতে পারেননি। ফলে এখনো দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে।