বিআরটিএতে সেবাপ্রার্থীদের ভিড়, দালালচক্রের হয়রানির শিকার

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের কারণে সীমিত আকারে জরুরি সেবা কার্যক্রম চালু থাকলেও বিআরটিএতে প্রবেশের সব গেট বন্ধ রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, এই লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বিআরটিএর সব সেবা বন্ধ থাকার পর শনিবার (৮ মে) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে আজ (৯ মে) থেকে সীমিত আকারে গ্রাহকসেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনার পরও মূল প্রবেশ গেটে তালা ঝুলিয়ে সব কার্যক্রমকে স্থবির করে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মিরপুর অফিসের সামনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সেবাপ্রত্যাশীরা বন্ধ গেটের সামনে ভিড় জমাচ্ছেন। তবে গেট বন্ধ পেয়ে অনেকে হতাশ, অনেকে যাচ্ছেন ফিরে। আবার কেউ কেউ পড়েছে দালালদের ফাঁদে।

৫ মিনিটে হয়রানি ছাড়া কাজ করিয়ে দিবে, এমন প্রত্যাশা দিয়ে অনেক সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে নেয় দালালরা। আজ রোববার (৯ মে) মিরপুর-১৩ নম্বর বিআরটিএ অফিসে এমন ঘটনা ঘটে।

আবুল হাসান নামে এক ব্যক্তি জাগো নিউজকে জানান, ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারের মালিকানা পরিবর্তন করেন তিনি। এখন ফিঙ্গার প্রিন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেটি বাড়াতে বিআরটিএতে আসেন । এসে গেট বন্ধ দেখে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। সেবা পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর এক দালাল এসে কাজ করে দেয়ার নাম করে ৫০০ নিয়ে জাল সিল-স্বাক্ষর দিয়ে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়েছেন।

তিনি জানান, ফিঙ্গার প্রিন্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছেন না, সার্জেন্ট ধরলে মামলা করে দেবেন। এ কারণে কয়েক দিন ধরে বিআরটিএর সামনে এসে গেট বন্ধ থাকায় চলে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আজ দীর্ঘ সময় গেটের সামনে দাঁড়ালে এক দালাল কাজ করিয়ে দেয়ার কথা জানায়। তাকে ৫০০ টাকা দিলে আমাকে নিয়ে একটি স্থানে দাঁড়িয়ে রেখে জাল সিল-স্বাক্ষর দিয়ে এনে আমার হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়ে।’

অনেক ভুক্তভোগী জানান, দায়িত্বরত আনসার বলছেন বন্ধ অথচ দালালদের টাকা দিলেই সব কাজ হচ্ছে। একদিকে সব পরিবহন চালু করা হয়েছে। অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মেয়াদ বাড়াতে এলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্য আশরাফুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিন প্রায় ১ হাজারের ওপর মানুষ বিভিন্ন সেবা নিতে আসছেন।

তার মধ্যে রোড পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি, মালিকানা পরিবর্তন, নতুন রেজিস্ট্রেশন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স টোকেনের টাকা জমা দেয়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আসছেন। বিআরটিএতে সব সার্ভিস বন্ধ থাকায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গেট বন্ধ রাখা হচ্ছে। গেট বন্ধ থাকায় শত শত মানুষ এসে গেটের সামনে ভিড় করছে। এ কারণে গেটের বাইরে স্বাস্থ্যবিধির বালাই থাকছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব সেবা চালু রয়েছে তেমন ১০ জনের কাগজ নিয়ে জমা দেয়া হচ্ছে, কাজ হলে তা এনে ডেকে ডেকে দেয়া হচ্ছে। কাউকে গেটের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।’

গেটের বাইরে ভিড় থাকায় দালালরা ভিড়ের মধ্যে ঢুকে কাজ করিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে নানাভাবে প্রতারণা করছে, অনেকে তাদের খপ্পরে পড়ছেন বলেও জানান এই আনসার সদস্য।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর মিরপুর জোনের সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিকুল আলম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে জরুরিসেবা হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নতুন রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে পণ্য পরিবহনকারী পরিবহনের রোড পারমিট শেষ হলে তা বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত এলে সব সেবা চালু করা হবে।’

দালাল ধরলে সব কাজ হচ্ছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা পারবো না তা দালাল কীভাবে পারবে। তারা জাল-জালিয়াতি করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে। আমাদের নজরে এলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ফাইবার আইটির সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ায় ২০১৯ সালের জুলাই থেকে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয়েছে তারা পাইলটিং হিসেবে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও দিনাজপুর জেলার কিছু স্থানে এ কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আগামী জুলাই-আগস্ট থেকে নতুন ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে বলেও জানান তিনি।