রাজধানীতে সিটিং সার্ভিসের নামে চলছে চিটিং

সুমন ইসলাম:

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিল সিস্টেমে কোনও গণপরিবহন চলবে না বলে মালিক সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলেও তা মানছে না অধিকাংশ পরিবহণ মালিক। নিজেদের মতো করে পরিচালনা করছে গাড়ি। চলছে ভোক্তা বা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে চিটিংবাজি। পাশাপাশি সরকারি ভাড়ার তালিকা গাড়িতে রাখা হলেও তা টানানো হয়নি। আগের মতোই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

রবিবার (১৪ নভেম্বর) বিভিন্ন যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।

অন্যদিকে এখনও রাজধানীর গণপরিবহনগুলোতে ভাড়ার তালিকা ও জ্বালানি ব্যবহার সংক্রান্ত স্টিকার লাগানো হয়নি। তাই এখনও কাটেনি অতিরিক্ত ভাড়ার ভোগান্তিও।

জানা গেছে, গত বুধবার (১০ নভেম্বর) ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির কার্যালয়ে বাস ভাড়া বাড়ানোর পরবর্তী অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনদিনের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সিটিং এবং গেটলক থাকবে না বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্যাহ। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজধানীতে ওয়েবিল সিস্টেমেও আর বাস চলবে না। গাড়িতে ভাড়ার চার্ট ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর পরিবহনগুলোতে সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রীতিতে পরিণত হওয়ার পরের ধাপে আসে ওয়েবিল পদ্ধতি। নির্ধারিত দূরত্বে কতজন যাত্রী উঠছে সেটা গণনা করার পদ্ধতি এটি। একজন লাইনম্যান নির্ধারিত দূরত্বে একটি কাগজে যাত্রীর সংখ্যা লিখে স্বাক্ষর করে দেন। কম যাত্রী নিয়ে বেশি ভাড়া আদায়ের জন্য ওয়েবিল নামের এ পদ্ধতি চালু করেছিল বাস মালিকরা। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে কোনও যাত্রী যদি মিরপুর থেকে শাহবাগ আসতে চান, তবে তাকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়।

সকালে এ বিষয়ে কথা হয় রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি বাসাবো বৌদ্ধমন্দির থেকে ফার্মগেট যাবেনেউঠেছেন লাব্বায়েক পরিবহণে, ভাড়া  দিতে হচ্ছে ২৬ টাকা। অথচ চার্ট  পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারি নির্ধারিত ভাড়া মোটে ১৪ টাকা। এ বিষয়ে গাড়ির সহকারির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাজে ব্যবহার করেন, বলেন মালিকদের সঙ্গে কথা বলেতে।

অপর যাত্রী হাবিব বলেন,  এই রুটে  দুটি সার্ভিস চালু রয়েছে। একটি লাব্বায়েক আর একটা লাভলি। এরা দুটোই একচেটিয়া ব্যবসা করছে। সরকারি নিয়মের কোনো কিছুই তারা মানছে না। এর প্রতিবাদ করলে হতে হয় নাজেহাল। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান পরিচালনা প্রয়োজন।

সম্প্রতি ডিজেলের দাম পুনর্নির্ধারণের কারণে গত ৭ নভেম্বর ঢাকায় ডিজেলচালিত বড় বাসে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা ও মিনিবাসে ২ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় বিআরটিএ। বড় বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয় ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা। যেসব বাস সিএনজিতে চলে, সেগুলোর ভাড়া বাড়বে না।

সরেজমিনে শনিবারও দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনে চলছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। যাত্রীদের সঙ্গে এ নিয়ে বাকবিতণ্ডাও চলছে আগের মতো।

রাজধানীতে প্রতি কিলোমিটার রাস্তায় বাসভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করে দিলেও আদায় করা হচ্ছে ৪ টাকারও বেশি। এ ছাড়া সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের সিস্টেম তো আছেই।

এ প্রসঙ্গে বাস মালিকদের সংগঠন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্যাহ জানিয়েছেন, কোনও গেইটলক ও সিটিং সার্ভিস চললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে বিষয়টি মনিটরিং করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত কেউ আদায় করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।