‘এখনো ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি’

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: জ্বালানি খাতের নানা সংকটের মধ্যেই এবার বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট কারণ দেখিয়ে সরকার এমন চিন্তা করছে।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিসভার সদস্যরা এ বিষয়ে আলোচনা করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জ্বালানি বিভাগকে নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

সরকারের নতুন জ্বালানী নীতি সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করে ক্যাব এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, জনগণকে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি করে দিচ্ছে সরকার। এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়ার কাছে এ অঞ্চলের মানুষ জিম্মি ছিল। এখনো ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে এমনভাবে জিম্মি।

তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে জ্বালানি আমদানি করার মধ্যে ভালো কিছু্ই নেই। সরকারের জ্বালানি নীতির অভিজ্ঞতা থেকে মনে করছি, জাতীয় সক্ষমতা বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে এমন আমদানি-নির্ভরতার কারণে। প্রথমত, সরকার জ্বালানি খাতের আমদানি-নির্ভরতা বাড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকার এখন বেসরকারি খাতে দিয়ে দিচ্ছে।

আমরা দেখেছি, বিপিসি ফার্নেস অয়েল আমদানি করলে প্রতি লিটারে ব্যয় হয় ৭২ টাকা। সেটা বেসরকারি খাত থেকে কিনছে ৯৪ টাকা লিটারে। তার মানে প্রতি লিটারে ১৬ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এরকম ব্যবসা পৃথিবীর কোথাও আছে কি না আমার জানা নেই। গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার জন্য এমন সিদ্ধান্ত। সরকারের জ্বালানি নীতি সর্বনাশ ডেকে আনছে।

ক্যাবের এই উপদেষ্টা বলেন, একজন ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো দাম বাড়ালে তাকে জরিমানা গুনতে হয়। এটি আইনের দর্শন। এটি সরকার বারবার লঙ্ঘন করছে কেন? সরকারের নীতি ভোক্তার স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থে সরকার এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে যাচ্ছে। রিফাইনড করা জ্বালানি নিয়ে এর আগেও নানান কারসাজি হয়েছে। এখনো তাই হবে। জনগণকে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি করে দিচ্ছে সরকার। এক সময় ইস্ট ইন্ডিয়ার কাছে এ অঞ্চলের মানুষ জিম্মি ছিল। এখনো ভোক্তারা ব্যবসায়ীদের কাছে এমনভাবে জিম্মি।

বিদ্যুতের দামও বাড়ছে ২০ শতাংশ। ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, সরকার বলছে, এ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে মোট ১৭ হাজার কোটি টাকা। মোট ঘাটতি ২৫ হাজার কোটি টাকা। সরকার ২০ শতাংশ দাম বাড়িয়ে ঘাটতি সমন্বয় করতে চাইছে।

আমরা সরকারের এই কথাকে চ্যালেঞ্জ করেছি। আমরা গণশুনানিতে বারবার বলেছি, অভ্যন্তরীণ অনেক খাত রয়েছে যেখান থেকে এই ঘাটতি সমন্বয় করা সম্ভব। আমরা হিসাব করে দেখিয়েছি। সরকার আমাদের কথা শোনেনি।

সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা বলে জনপ্রিয় ইস্যু বানিয়েছে, যেখানে সরকারের রাজনীতি, নির্বাচন গুরুত্ব পায়। সুতরাং এখানে সরকারের ভর্তুকি দিতেই হবে। আমরা বলেছি ভোক্তারা নানাভাবে, নানা খাতে বাড়তি মূল্য দিচ্ছে। এর সঙ্গে সমন্বয় করলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কোনো দরকার ছিল না।

নতুন পলিসি মূলত সরকারেরই নীতির প্রতিফলন। সরকার ব্যবসা করছে। কিন্তু ব্যবসারও তো ধরন আছে। চাইলেই দাম বাড়াতে পারে না। আইন আছে। একজন ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো দাম বাড়ালে তাকে জরিমানা গুনতে হয়। এটি আইনের দর্শন। এটি সরকার বারবার লঙ্ঘন করছে কেন? সরকারের নীতি ভোক্তার স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করছে।

সৌজন্যে: জাগো নিউজ