‘ভোক্তা ঋণ বাড়লে অর্থনীতি আরও অস্থির হবে’

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ‘ঋণ মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। এটি মাথায় রাখা দরকার। ভোক্তা ঋণও মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। ক্রমাগত ঋণ বাড়তে থাকলে মূল্যস্ফীতি বাড়বেই। চাহিদা না বাড়ালে আরও খারাপ অবস্থা হয়। চাহিদা আর জোগানের ব্যবধান কম থাকলে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকে। বাংলাদেশে তো আসলে কোন সূচক ধরে বিশ্লেষণ করা যায় না। আজ যে অবস্থায় আছে কাল তা উল্টে যেতে পারে।’

বলছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গতবারের তুলনায় এবার প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ভোক্তা ঋণ বেড়েছে। ভোক্তা ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই এখন ক্যাশে লেনদেন করতে চায় না। ক্যাশ বহন করতে চায় না। এই প্রবণতা পৃথিবীজুড়েই বেড়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভোক্তা ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই এখন ক্যাশে লেনদেন করতে চায় না। ক্যাশ বহন করতে চায় না। এই প্রবণতা পৃথিবীজুড়েই বেড়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা, কল্যাণ প্রশ্নেও ভোক্তারা এমন ঋণ নিচ্ছে। চাকরিজীবীরা এই ঋণে অধিক সুবিধা পেয়ে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের বিভিন্ন সুযোগ দিচ্ছেন। আর ক্রেতারা তা লুফে নিচ্ছেন। ঋণের এই সুযোগ না দিলে তার ব্যবসা ঘাটতিতে পড়বে। জিনিস বিক্রি না হলে ব্যবসা করবে কীভাবে? ব্যবসার নানা পলিসি থাকে। এখানে তিনটি পক্ষই লাভবান হচ্ছে। প্রথমত, ভোক্তারা কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া ব্যাংকের সুবিধা পাচ্ছেন। ব্যাংক গ্যারান্টি ছাড়াই এই ঋণ। ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করতে পারছেন। ব্যাংক সুদ পাচ্ছে।’

বাংলাদেশ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির কারণে ভোক্তা ঋণ আসলে কোনো সিস্টেমে থাকছে না। বাজার পরিস্থিতি সব নড়বড়ে করে দিচ্ছে। ঋণের সঙ্গে পণ্যমূল্যের সামঞ্জস্য না থাকায় ভোক্তা-ব্যবসায়ী কেউ ঠিক অবস্থানে থাকতে পারছেন না। এ কারণে মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছে। অনেকের এছাড়া কোনো উপায় নেই। বাড়ি-গাড়ি কজন মানুষের আছে? সবাই তো নির্দিষ্ট আয়ের ওপর চলে। এই আয়ে এখন প্রচণ্ড চাপ। মানুষ দিশেহারা বলেই ভোক্তা ঋণ বাড়ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণের বোঝা বেড়ে গেছে। ভোক্তা ঋণ বাড়ার এটিও একটি কারণ। ভোক্তা ঋণ বাড়লে অর্থনীতি আরও অস্থির হবে।’

তিনি বলেন, ‘ক্রেডিট কার্ডে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এখানে ঝামেলা কম। সুদ বেশি। খেলাপি কম। হাতে গোনা দু-একজন গ্রাহক হয়তো খেলাপি হচ্ছেন। ব্যবসায় এমনটি থাকবেই। স্বল্পমেয়াদি ঋণ ব্যাংকের জন্য সুবিধা। একজন শোধ করলে আরেকজনকে দিতে পারছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে যেকোনো ঋণ মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। এটি মাথায় রাখা দরকার। ভোক্তা ঋণও মূল্যস্ফীতি বাড়ায়। ক্রমাগত ঋণ বাড়তে থাকলে মূল্যস্ফীতি বাড়বেই। চাহিদা না বাড়ালে আরও খারাপ অবস্থা হয়। চাহিদা আর জোগানের ব্যবধান কম থাকলে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকে। বাংলাদেশে তো আসলে কোন সূচক ধরে বিশ্লেষণ করা যায় না। আজ যে অবস্থা আছে কাল তা উল্টে যেতে পারে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো মিল না থাকার কারণেই এমন হচ্ছে। একশ্রেণির মানুষের আয় ভয়াবহভাবে কমে গেছে। আবার যার আয় ঠিক আছে সে ব্যয়ের সঙ্গে মেলাতে পারছে না। এ কারণে ঋণের দিকে যেতে হচ্ছে। হয় ক্রেডিট কার্ড না হয় সঞ্চয়পত্রের ওপর ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে ভোক্তাদের।’

সৌজন্যে, জাগো নিউজ।