মিরপুর রুটের সব বাসে ই-টিকেটিং রোববার থেকে

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: রাজধানীর মিরপুর রুটের সব বাসে (৩০ কোম্পানি) রোববার থেকে ই-টিকেটিংয়ের অধীনে চলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

শনিবার রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি আয়োজিত ‘রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে চলাচলকারী ৬০ কোম্পানির বাস এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা ও ঢাকা শহরতলীর ৯৭ কোম্পানির বাস ই-টিকেটিংয়ের আওতায় চলাচল করবে।’

তিনি বলেন, ‘গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করা হয়। ওই সময় মিরপুরের আটটি বাস কোম্পানিতে প্রথমে পরীক্ষামূলক ভাবে এটি চালু করা হয়েছিলো। এই পদ্ধতিতে যাওয়ার পর দেখা গেল মালিকরা ইনকাম সঠিক ভাবে পাচ্ছে না। একদম কমে গেছে। তাদের অনেকে বাস চালাতে আগ্রহী হলো না। পরে তাদের সঙ্গে কথা বলে ই-টিকেটিং মেশিন বাসের ভেতরে দেয়া হলো। পরীক্ষামূলক ভাবে সেই কাজটি করায় দেখা গেছে আগের চেয়ে ফলাফল অনেক ভালো এসেছে। এতে করে মালিকদের ইনকাম বেড়েছে। আগে গাড়িতে দু’জন কর্মী থাকলেও এখন সেখানে তিন জন কর্মীর প্রয়োজন হচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন চালক, হেলপার ও কন্ট্রাক্টর।’

খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আমরা একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছি ই-টিকেটিংয়ের জন্য। দু’জন কর্মকর্তা এটি সমন্বয় করবেন। এর জন্য আমরা একটি হটলাইন তৈরি করেছি যেখানে তিনটি নম্বর রয়েছে। নম্বরগুলো হলো- ০১৬১৮৯৩৩৫৩১, ০১৬১৮৯৩৬১৮৫ এবং ০১৮৭০১৪৬৪২২। সমিতির পক্ষ থেকে আট জনকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, যারা পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে বিষয়টি দেখবেন। পাশাপাশি কয়েকটি কোম্পানির পক্ষ থেকে তারাও স্পেশাল চেকার রাখবেন।’

তিনি বলেন, ‘রোববার থেকে মিরপুরের ৩০টি কোম্পানিকে আমরা এই টিকেটিংয়ের আওতায় নিয়ে এসেছি। এর জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মিরপুর মালিক সমিতির সেন্ট্রাল কমিটির মাধ্যমে সব কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলকারী সব কোম্পানির বাসকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরতলীতে (গাজীপুর, সাভার, নবীনগর, ধামরাই, মুন্সীগঞ্জ) চলাচলকারী ৩৭টি বাসকেও ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনা হবে। সুতরাং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে চলাচলকারী সব বাস ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আসবে। ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে চলাচলকারী মোট বাসের সংখ্যা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে চলে তিন হাজার ১১৪টি এবং শহরতলীতে চলে দুই হাজার ৩৩৬টি।

ই-টিকেটিং চালু হলে ঢাকা শহরের মধ্যে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে যে অসম প্রতিযোগিতা থাকত সেগুলো বন্ধ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, ‘ই-টিকেটিং চালু হলে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। কারণ চালকদের বেতন নির্ধারণ করা দেয়া থাকবে। ই-টিকেটিংয়ের জন্য বর্তমান থেকে আরও অনেক টাকা বেশি বেতন নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে তাদের।’

ই-টিকিট চালু হলে গাড়ির সংখ্যা কমে যায়, যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ একেবারেই সঠিক। শুরুর দিকে যখন আমরা ই-টিকেটিং রাস্তায় দেয়া শুরু করেছি তখন মালিকরা ইনকাম ঠিকমতো পেত না। যার ফলে মালিকরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে উৎসাহী ছিল না। পরে আমরা সাধারণ মালিকদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে বাসের ভেতরে ই-টিকেটিং মেশিনটি দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।’

আপনারা তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রোববার মিরপুরে ই-টিকেটিং চালু করবেন, এরপরও যদি বাস মালিকরা বাস চালাতে আগ্রহী না হয় সে ক্ষেত্রে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আমরা আগামীকাল (রোববার) থেকে যে কোম্পানিগুলোকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনছি তাদের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেই আনছি এবং তারা রাজি হয়েছেন। তারপরও না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের অবশ্যই ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আনা হবে।’