যেসব জেলায় যাওয়া যাবে পদ্মা সেতু দিয়ে

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আগামী ২৫ জুন সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে দেশের ২১টি জেলায় যাওয়া যায়। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ছয় কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা, বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ উপকারভোগী হবেন এই সেতুর। পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চল ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ফরিদপুর জেলাগুলোর উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল লক্ষ্য।

পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে দেশের ২১টি জেলায় যাওয়া যায়। সেতু চালু হয়ে গেলে জাজিরা প্রান্ত থেকে বরিশাল যেতে বড়জোর দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। এছাড়া খুলনা যাওয়া যাবে তিন ঘণ্টায়, আর ফরিদপুর যেতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট।

জাজিরা মাঝিরঘাট থেকে ফেরি ও জোয়ার-ভাটা ভেদে মাওয়া প্রান্তে যেতে এতদিন কখনও এক ঘণ্টা, আবার কখনও দেড় ঘণ্টা লেগেছে। সেতু চালু হলে সরাসরি বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগতে পারে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। কারণ ছয় কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটেই পৌঁছানো যাবে মাওয়া প্রান্তে। তেমনই খুলনা, যশোর থেকেই চার, সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে।

পদ্মা সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। ২০২০ সালের ০৯ এপ্রিল এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সাধারণ ভাবে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে এই এক্সপ্রেসওয়ের সুফল আরও ভালো ভাবে পাবে সাধারণ মানুষ।

ফেরি ব্যবস্থার কারণে এই রুটে এতদিন বিলাসবহুল যান চালাতে পারেননি বাস মালিকরা। তাই এখন তারা পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়ে নামছেন। পরিবহন মালিকরা ধারণা করছেন, পদ্মা সেতুর কারণে কুয়াকাটার পর্যটনে আরও সম্ভাবনা বাড়বে।

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমদ তালুকদার বলেন, ‘শরীয়তপুরের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু স্বপ্নের মতো। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাদের রুট পারমিট আছে, তারাই নতুন বাস নামাচ্ছেন। নতুন আঙ্গিকে আমরা বাস তৈরি করছি। এখানে নতুন ভাবে বিনিয়োগ করছি।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা মহাবিপ্লব ঘটবে। সেতু চালু হলে পরিবহন কোম্পানিগুলোর অত্যাধুনিক বাস বিভিন্ন জেলার সঙ্গে চলাচল শুরু করবে। তবে গাবতলী থেকে বাস পদ্মা সেতু হয়ে যেতে পারবে না। কারণ, দিনের বেলা ঢাকায় ঢোকার অনুমতি নেই। তবে সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি নিয়মিত চলতে পারবে।’