নওগাঁয় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: নওগাঁয় সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় কারাগারে থাকা চালকের মুক্তির দাবিতে জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

মঙ্গলবার বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়ে সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেন তারা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ রুটে চলাচলকারী নানা শ্রেণীপেশার মানুষ।

জানা যায়, গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় শহরের মশরপুর বাইপাস এলাকায় আব্দুল জলিল শিশুপার্কের সামনে হানিফ পরিবহনের একটি দ্রুতগামী বাস কয়েকটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও একটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। এতে পার্কে ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীসহ প্রায় ৩০ জন গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার পর সেখানে বাস রেখে সটকে পড়েন চালক ইমরান হোসেন। পরে এ ঘটনার পরের দিন সদর মডেল থানায় শহরের রজাকপুর এলাকার জোবায়ের হোসেন বাদী হয়ে বাস চালকের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করেন। এ মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ১৬ জুলাই আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করেন চালক ইমরান হোসেন। পরে বিচারক সেই আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তার জামিন হয়নি।

সর্বশেষ সোমবার তার জামিনের আবেদন তৃতীয় বারের মতো নাকচ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন পরিবহন শ্রমিকরা। এরপর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দদের বৈঠকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, সড়কে অসংখ্য ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করছে। বাস চালকদের থেকে সড়কের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাঁদা নিচ্ছে। এসব প্রতিরোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেই। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা হলে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান কড়াকড়ি। বিচরকরাও জামিন দিতে চান না। বাস বন্ধ থাকলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হয়। এতে যাত্রীদের পাশাপাশি আমাদেরকেও অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে। তবে নিজেদের সুরক্ষা ও স্বার্থ রক্ষায় পিছু হটার সুযোগ নেই। কারাগার থেকে যতদিন ইমরান বের না হচ্ছে ততদিন এই ধর্মঘট চলবে।

শহরের বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটে নওগাঁ শহরের সঙ্গে জেলার ১১টি উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী রাজশাহী, জয়পুরহাট ও বগুড়ার বাস যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে করে এ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষদের পড়তে হয়েছে চরম বিপাকে। অনেকে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে সিএনজি ও ব্যটারী চালিত অটোরিকশায় যাতায়াত করছেন। এক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া ও অতিরিক্ত সময় গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে বাড়তি ভাড়া দিয়েও কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

মহাদেবপুর উপজেলা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসেছিলেন শিক্ষক আমিনুল ইসলাম। সড়কের দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের একটা কাজে শিক্ষা অফিসে যাবার জন্য শহরে এসেছি। গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারি বাস বন্ধ। তখন বাধ্য হয়ে ৬০ টাকায় সিএনজি নিয়ে আসতে হলো। বাস বন্ধ থাকার সুযোগে সিএনজি চালকরা অতিরিক্ত ২০ টাকা ভাড়া আদায় করছেন। সময়মতো পৌঁছাতেও পারলাম না।

সড়কে এমন দুর্ভোগের কথা বলছিলেন নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শহরের একটি ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেন তারা। বালুডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে প্রত্যেকেই এসেছিলেন রাজশাহী যাওয়ার জন্য। তারা বলেন, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। তাই বৃষ্টির মধ্যে রাজশাহী ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়েছিলাম। এসে শুনছি বাস রাজশাহীতে যাবে না। এখন সিএনজিতে থেমে থেমে গেলে যাতায়াতেই অতিরিক্ত ৩ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। আবার ভাড়াও অনেক বেশি। তাই মেসে ফিরে যেতে হচ্ছে।

জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে এক চালককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওই চালকসহ গ্রেপ্তার অন্যান্য পরিবহন শ্রমিকদের মুক্তির দাবিতে শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরেও ওই চালকের জামিন হয়নি। তাই ঠিক কতদিন পর এই বাস চলাচল শুরু হবে, এটা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপর নির্ভর করছে।

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) গাজিউর রহমান বলেন, আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের কিছু করণীয় নেই। বিষয়টি বোঝাতে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দদের ডাকা হয়েছিল। তাদের দাবি দাওয়া থাকলে সেটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।