জ্বালানি সনদ চুক্তি থেকে মুখ ফেরালো ইউরোপীয় কমিশন: ক্যাবের অভিনন্দন

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: ইউরোপিয়ান কমিশনের ডিরেক্টর জেনারেল ফর এনার্জির দপ্তর থেকে ০৭ জুলাই এক সংবাদ বার্তায় জানানো হয়েছে যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলো এবং ইউরাটম যেন সম্মিলিত ও সমন্বিত ভাবে এনার্জি চার্টার চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে, সেই প্রস্তাব করেছে ইউরোপীয় কমিশন।

ইউরোপীয় কমিশন মনে করে, এনার্জি চার্টার চুক্তি ইউরোপীয় সবুজ সমঝোতা (গ্রীন ডিল), প্যারিস চুক্তির আলোকে গৃহীত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের উন্নত জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। শুধু তাই নয়, কমিশন এই চুক্তি সংস্কারের আগের প্রস্তাব থেকেও নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। ইউরোপীয় কমিশন তাদের এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের আইনী ও সাংগঠনিক কাজগুলো শেষ করার জন্য ইইউ ও তার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়েছে এবং প্রত্যাশা করেছে যে, দ্রুতই এই এনার্জি চার্টার ট্রিটি বা জ্বালানি সনদ চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, জনস্বার্থ পরিপন্থী এই বহুজাতিক, বহুপক্ষীয়, আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এই জনস্বার্থপরিপন্থি আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশ সরকার যাতে সম্মতি না দেয়, সে জন্য গত এক বছর ধরে জনমত সংগঠিত করে সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

ইসিটি বা জ্বালানি সনদ চুক্তি নিয়ে ক্যাব একটি পলিসি ব্রিফ তৈরি করে সাংবাদিক ও সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধিদের নিয়ে সক্ষমতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (ক্যাপিাসিটি বিল্ডিং ট্রেনিং) ও কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছে। এনজিও ও সিভিল সোসাইটিকে নিয়ে জ্বালানি সনদ চুক্তির ক্ষতিকর বিষয় তুলে ধরে জাতীয় পর্যায়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে এবং তার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জনঅবহিতকরণের কর্মসূচি পালন করেছে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্বালানি সনদ চুক্তির ভয়াবহতা তুলে ধরে তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনমত গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ক্যাবের ডিজিটাল মুখপাত্র ভোক্তাকণ্ঠের মাধ্যমে বছরব্যাপী অনলাইন প্রচারণা, ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ এই বিষয়ে সরাসরি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জনসচেতনতা তৈরির কাজ করেছে। এই ইসিটি চুক্তি যাতে বাংলাদেশ সরকার স্বাক্ষর না করে, সে জন্য গত ১৭ জানুয়ারি সারাদেশে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছে ক্যাব।

এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থী, বিভিন্ন এনজিও এবং সামাজিক সংগঠন অংশগ্রহণ করে এবং ২৬ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশ সরকারের জ্বালানি সচিবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জ্বালানিখাত সংস্কারে ক্যাব আনুষ্ঠানিক ভাবে যে ১৩ দফা দাবি প্রকাশ করেছে, তাতেও এই চুক্তি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ক্যাবের এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে। এই চুক্তির বিরুদ্ধে পৃথিবীর বহু দেশে যে সিভিল সোসাইটি আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশও (ক্যাবও), সরকারের কাছে এই চুক্তি স্বাক্ষরের সকল পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করার কারণে চুক্তিটির কার্যকারিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে।

তাই ক্যাব আশা করছে, জ্বালানিখাত সংস্কারে ক্যাব আনুষ্ঠানিক ভাবে জ্বালানি রূপান্তর নীতিমালা-২০২২ এ যে ১৩ দফা দাবি প্রকাশ করেছে সেটাকে অনুসরণ করবে ও ইসিটি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকবে এবং জ্বালানিখাতে ভোক্তাস্বার্থকে জনমুখী করার সকল পদক্ষেপ নেবে।

জ্বালানি সনদ চুক্তি (Energy Charter Treaty) কি?
জ্বালানি সনদ চুক্তি (Energy Charter Treaty) একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। চুক্তিটি ১৯৯৪ সালে প্রণীত হয়। এই চুক্তি জ্বালানি শিল্পে বিশেষত অনবায়নযোগ্য তথা কার্বনসমৃদ্ধ জ্বালানি বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে বহুপক্ষীয়, বহুদেশীয়, আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠিত করে। এই চুক্তি স্বাক্ষরে বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই চুক্তিটি শুধু জ্বালানিখাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিনিয়োগকারী কোম্পানি, ব্যক্তি কিংবা অংশীদার বা অন্য কোনো ভাবে এই বিনিয়োগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তৃতীয় পক্ষকে সুরক্ষা দেয়।

বিদেশী বিনিয়োগকারী ও কমিশন এজেন্টদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কারণে জ্বালানি সনদ চুক্তি একেপেশে, ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী এবং ভারসাম্যহীন। বিরোধ নিরসন প্রক্রিয়া স্বাগতিক রাষ্ট্রের জন্য একটি আইনি ফাঁদ।

সুতরাং জ্বালানি সনদ চুক্তিতে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে বিদ্যমান আইন ও বিধি-বিধান কার্যকারিতা হারাবে। ফলে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২২ বাস্তবায়নে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেবে।

তাই কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ভোক্তাপক্ষ থেকে এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে এবং এই চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এবং জ্বালানিখাত সংস্কারে ক্যাব আনুষ্ঠানিক ভাবে যে ১৩ দফা দাবি দিয়েছে তাতেও এই ইসিটি সিগনেচার করা থেকে সরকারকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানাচ্ছে।

Related posts:

বোতলজাত পানির মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন মঙ্গলবার
নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার ক্যাবের মানববন্ধন
৯টাকার গ্যাস ২০ টাকা করতে গণশুনানিঃ উচ্চমূল্যে স্পট মার্কেট থেকে কেনার বিরোধিতা ক্যাবের
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বাজার পরিদর্শন
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের গণশুনানীতে ক্যাবের প্রশ্ন
মানিকগঞ্জ ক্যাবের সভাপতি ছানু, সম্পাদক তুলিপ
বাগেরহাটে ভুল ঔষধ দেওয়ায় জরিমানা, ভোক্তা পেলো ক্ষতিপূরণ
তেলের দাম নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন ছড়াবে
চট্টগ্রামে উন্মুক্ত স্থানে ইফতারী বিক্রি বন্ধ না হওয়ায় ক্যাবের ক্ষোভ
সরকারের ডিম আমদানির সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট ক্যাব