ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, তবুও আসে না টিসিবির গাড়ি

মধ্যদুপুর। রাজধানীর নিউমার্কেটের ভেতর থেকে ভেসে আসছে জোহরের আজান। মার্কেটের অদূরে আজিমপুর কবরস্থানের দেয়াল সংলগ্ন ফুটপাতে এ সময় বেশ কিছু সংখ্যক নারী-পুরুষকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের সবার হাতেই একটি করে বাজারের ব্যাগ। কৌতুহলবশত একটু লক্ষ্য করতেই দেখা যায়, নীলক্ষেত থেকে আসা প্রতিটি যানবাহনের দিকে তাদের সবার দৃষ্টি।

তেল, চিনি ডাল ও পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্নআয়ের এসব মানুষ সরকারি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র পণ্যবাহী ট্রাকের জন্য সকাল থেকে অপেক্ষা করছিলেন। একটু পরপর রাস্তার দিকে তাকাচ্ছিলেন কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও টিসিবির ট্রাক তখনও আসে না।

টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষমাণদের একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব বৃদ্ধা আমেনা বেগম। আজিমপুরের বাসিন্দা আমেনা বেগম জানান, লাঠি ভর করে তিনি সকাল ৯টা থেকে টিসিবির পণ্য কেনার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। দেরি করে আসলে পণ্য পাওয়া যায় না মন্তব্য করে তিনি জানতে চান ট্রাক আসবে কিনা।

গৃহবধূ রহিমা জানান, টিসিবির ট্রাক তাদের খেয়ালখুশিমতো সময়ে আসে। কখনো বেলা ১১টায়, কখনো দুপুরে। আবার কখনো বা বিকেলে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গরিব হইয়া ঠেকছি, তারা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো সময়ে আসলেও আমাগো সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়াইয়া থাকতে হয়। দেরি করলে সিরিয়াল পেছনে পড়ে। অনেক সময় ট্রাকে মাল থাকলেও তারা অন্য জায়গায় চলে যায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মতিন মিয়া নামের এক দিনমজুর জানান, বর্তমানে টিসিবির ট্রাকে করে দুই কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি, দুই লিটার তেল ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজসহ মোট ৫৭০ টাকার প্যাকেজে মালামাল বিক্রি হচ্ছে। তিনি জানান, টিসিবির পেঁয়াজের মান খুবই খারাপ। অনেক সময় পেঁয়াজ পচা থাকে। তাছাড়া স্বাদও পাওয়া যায় না। বাজার থেকে অপেক্ষাকৃত দামে সস্তা হওয়ায় তাদের মতো গরিবরা ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনতে বাধ্য হন বলে জানান তিনি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর দাম ভোক্তাদের নাগালে রাখতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সাশ্রয়ীমূল্যে সারাদেশে চারটি পণ্য বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ৪৫০ জন ডিলারের ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সারাদেশে এ বিক্রি কার্যক্রম চলছে।