ধর্মের নামে ২০০ কোটি টাকার  প্রতাড়ণা, দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

ধর্মকে সুকৌশলে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ‘সুদমুক্ত ব্যবসা’র নামে বিভিন্ন পেশার ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষের কাছ থেকে অন্তত ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। নরসিংদীর সদর থানাধীন চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকায় শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি নামে কথিত ‘শরিয়াভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান’ গড়ে প্রতারণা করে তারা। চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গ্রেফতাররা হলো- শাহ আলম (৫০), দেলোয়ার হোসেন শিকদার (৫২), কাজী মানে উল্লাহ (৪৪), সুমন মোল্লাহ (৩৩) ও আ. হান্নান মোল্লাহ (৩০)। শনিবার (১২ মার্চ) রাতে র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন ভেলানগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

রবিবার (১৩ মার্চ) সকালে র‌্যাবের কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, তাদের কাছে তথ্য ছিল- নরসিংদী জেলার প্রায় সব থানার ৫-৬ হাজার সাধারণ পেশাজীবী মানুষ একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে ব্যবসায় অতিরিক্ত লাভের আশায় শত শত কোটি টাকা অর্থ বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হয়েছেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে নরসিংদীর পলাশ থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয়। পাশাপাশি ভুক্তভোগীরা আইনি সহযোগিতার জন্য নরসিংদীতে অবস্থিত র‌্যাব-১১ এর কার্যালয়েও আবেদন করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, ২০১০ সালে নরসিংদীর ওই এলাকায় শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কোম্পানি নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে এই প্রতারক চক্র। চক্রটির অন্যতম হোতা শাহ আলম নিজে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে চারটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে এবং ২৪ জন জনবলের সমন্বয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এছাড়া সে তার প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ২০ জন পরিচালক নিয়োগ দেয়। আত্মীয় বা পরিচিতদের তারা পরিচালক ও পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিতো। পরবর্তী সময়ে জেলার বিভিন্ন থানার জনবহুল ও ব্যবসায়িক এলাকায় জাঁকজমকপূর্ণ শাখা অফিস স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো; শাহ সুলতান এম সি এস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, স্বদেশ টেক্সটাইল লিমিটেড, শাহ সুলতান টেক্সটাইল লিমিটেড ও শাহ সুলতান প্রোপার্টিজ লিমিটেড।

গ্রেফতার ৫ প্রতারক
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানিয়েছে, মাঠ পর্যায়ে গ্রাহক ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তাদের প্রায় ৩ শতাধিক কর্মী রয়েছেন, যাদের কোনও বেতন দেওয়া হয় না। কর্মীদের গ্রাহকদের বিনিয়োগের ১০ শতাংশ ও বছরান্তে ৬ শতাংশ অর্থ প্রাপ্তির প্রলোভন দেখানো হতো। আর বিনিয়োগকারীদের বার্ষিক ১২-১৬ শতাংশ মুনাফার প্রলোভন দেখাতো। প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা বেশ কয়েকজন গ্রাহককে উচ্চ মুনাফায় লোনও দেয়। ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান না হয়েও তারা ব্যাংকের মতোই গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করতো। একই সঙ্গে গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগৃহীত অর্থ ল্যান্ড প্রজেক্ট টেক্সটাইল ও নিজস্ব অন্যান্য ব্যবসায় বিনিয়োগের মাধ্যমে আত্মসাত করতো।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, গ্রাহকদের কেউ যদি তাদের আমানতের টাকা ফেরত চাইতো তখনই করোনা মহামারিসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে গচ্ছিত অর্থ ফেরত দিতে তালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে গ্রাহকরা অতিষ্ট হয়ে একজোট হয়ে টাকা ফেরত চাইলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় তারা। প্রতারক চক্রের প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ওমর ফারুক ও ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাসুদ রানা গ্রাহকদের লগ্নিকৃত টাকা দিয়ে নরসিংদীর বিভিন্ন স্থানে ৫-৬ একর জমি নিজেদের নামে ক্রয় করে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নামে নরসিংদীসহ বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ একর জমি রয়েছে।