জ্বালানি তেলের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: দেশে জ্বালানি তেলের সংকট হবে না, তেলের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদে নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

মজুতকৃত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য ছয় মাসভিত্তিক চুক্তি হয়ে থাকে। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মজুতকৃত জ্বালানি তেল দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে দুটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছাবে। অর্থাৎ দেশে জ্বালানি তেলের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

জ্বালানি তেলের মজুতের তথ্য তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের মজুতের পরিমাণ পরিশোধিত ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন, অপরিশোধিত ৮১ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন। মোট ৭ লাখ ১ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন।

জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাহিদা বিবেচনায় চলতি আগস্ট মাসে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন এবং সেপ্টেম্বরে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল, ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ও ২৫ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আমদানির সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এদিক থেকে দেশে কোনও বিদ্যুৎ সংকট নেই। বৈশ্বিক চলমান জ্বালানি সংকটের কারণে সরকার বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার ও পরিকল্পিত লোডশেডিং করার মাধ্যমে সৃষ্ট সংকট উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেত্র বিশেষে ১ হাজার মেগাওয়াট হতে ২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত পরিকল্পিত লোডশেডিং করা হচ্ছে। পরিকল্পিত এই লোডশেডিংয়ের বিষয়ে আগে থেকেই অবহিত করা হচ্ছে।

দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসেবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে সংসদকে জানান প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। অবশ্য সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এসব পদক্ষেপে দ্রুতই ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সার্বিক উন্নতি হবে। রংপুর-১ আসনের মসিউর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বল প্রবৃদ্ধি, সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং আন্তর্জাতিক কার্গো ফ্রেইট খরচ বৃদ্ধি, রফতানি হ্রাস, প্রবাস আয়ের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির কারণে এই শঙ্কাজনক পরিস্থিতি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার গত ১৪ বছর ধরে বাজেট ঘাটতি এবং ঋণের মাত্রা উভয়েই টেকসই ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। করোনা পরিস্থিতিসহ নানা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সমস্যার পরও বাজেট ঘাটতি জিডিপি’র পাঁচ শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব হয়েছে। ঋণ ও জিডিপি অনুপাতও স্বাচ্ছন্দ্যের পর্যায়ে রয়েছে; ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ৩৪ শতাংশে অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ঋণের স্থিতির প্রান্তিক সীমারেখার বেশ নিচে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী আয় বাড়াতে প্রণোদনা বাড়ানোসহ রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করা হয়েছে। ডলারের চাহিদা বাড়ানোর প্রবণতা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান সমন্বয়  করেছে। গত অর্থবছরে আগস্ট মাসের ডলারের দামের তুলনায় চলতি অর্থবছরের আগস্ট মাসে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বাড়িয়ে দাম ৯৫ টাকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংকের নিকট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রি করেছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমাতে, ব্যাক টু ব্যাক আমদানিসহ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এবং কৃষি সরঞ্জাম এবং রাসায়নিক সার আমদানির জন্য সরবরাহকারী/ক্রেতার ক্রেডিটের আওতায় ইউজেস (বিলম্বিত) সমকাল বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। আমদানি নির্ভরতা ও কম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ব্যয় বন্ধ অথবা হ্রাস করা হচ্ছে। বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং আন্ডার/ওভার ইনভয়েসিংয়ের বিষয়টি সতর্ক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। সরকারের নেওয়া এসব পদক্ষেপে শিগগিরই ব্যালেন্স অব পেমেন্টের সার্বিক উন্নতি হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।