‘রমজানে বাজার মনিটরিং আরও জোড়দার করা হবে’

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

সোমবার সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আদা, রসুন, হলুদ ও শুকনো মরিচের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।

মতবিনিময় সভায় আদা-রসুন, হলুদ ও শুকনা মরিচের খুচরা এবং পাইকারী ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি, ডিজিএফআই প্রতিনিধি, এনএসআই প্রতিনিধিসহ বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

ভোক্তার ডিজি বলেন, ‘কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার অস্থির হয়ে যায়। আসন্ন রমজান মাসে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে ভোক্তা অধিদপ্তর।’

তিনি বলেন, ‘রমজানের আগে আমাদের দেশি পেঁয়াজ উঠবে। এতে করে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। ৫০ টাকার মধ্যেই থাকবে দাম। কিন্তু আদা-রসুনের বাজার অস্থির। রমজান আসার আগেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। হঠাৎ করে আদা-রসুনের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বাড়ছে। কিছু পণ্য হয়তো আমদানি নির্ভর, ডলারের দাম বৃদ্ধি অনুসারে ২৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারতো। কিন্তু ডলারের বাজারের তুলনায় পণ্যের দাম আরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বাজার আরও অস্থির হয়ে যাবে।’

আদা-রসুনের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমাদের টিম আদা-রসুনের বাজার নিয়ে কাজ করেছে। আমরা কাওরান বাজারসহ শ্যামবাজার পাইকারি, খুচরা এবং আড়তে একটু খোঁজ নিলাম। আন্তর্জাতিক এলসি খোলার বিষয়টা খোঁজ নিলাম। যেমন- আদা, রসুন, শুকনা মরিচ এবং হলুদ, এগুলো কিন্তু ইম্পোর্ট (আমদানি) নির্ভরতা আছে। সম্পূর্ণ ভাবে দেশি উৎপাদন দিয়ে বাজার চালানো সম্ভব না। সেই ক্ষেত্রে এখানে যদি ইম্পোর্ট কমে যায় দেশীয় যে উৎপাদন সেখানে কিন্তু ঘাটতি পড়বে। সামনে রমজানের পরে কিন্তু কোরবানি। তাই এসব পণ্য যদি ইম্পোর্ট স্মুথ (সচল) না রাখতে পারি তাহলে স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে এই বাজার ধরে রাখা যাবে না। তাই আমদানি স্বাভাবিক না থাকলে রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে পাইকারী ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারকরা জানান, আমদানি না হওয়ায় আদা-রসুনের দাম বাড়ছে। ভারত থেকে রসুন আমদানি বন্ধ ছিল। চায়না থেকেও আমদানি হচ্ছে না। আদা-রসুন আমদানিতে এলসি স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়বে।

ব্যবসায়ীদের এলসি চাওয়ার বিষয়ে ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর জন্য একেক সময় একেক বাহানা দেস। এক সময় ডলার সমস্যা, আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এবার এলসি সমস্যাকে অজুহাত হিসেবে এনেছেন।’

তিনি বলেন, ‘রমজানের জন্য যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রয়োজন সেগুলো ইতোমধ্যেই এলসি করা হয়েছে। কারণ পণ্য আসার দুই থেকে তিন মাস আগে এলসি করতে হয়। সে অনুসারে রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ইতোমধ্যেই পোর্টে এসে পৌঁছেছে। এলসি ইস্যূটা একটা অজুহাত মাত্র।’

তবে ট্যারিফ কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি করা ভোগ্যপণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বেশি হতে পারে। তবে এর বেশি হবার কথা নয়।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, ‘অসাধু ব্যবায়ীরা খুবই নগন্য। তবে তাদের জন্য সকলের উপর দায় পড়ে। আমরা সকল ব্যবসায়ী সরকারের সকল আইন-কানুন মেনে ব্যবসা করতে চাই। এলসি এবং ডলারের দাম সমন্বয় করে বাজার ব্যবস্থাকে সুস্থ্য রাখতে হবে।’

কাওরান বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু কিছু কর্পোরেট কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছেমত দাম নিচ্ছে। চালের প্যাকেটে বাড়তি দাম বসিয়ে দিচ্ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির উছিলায় প্রতিনিয়ত দাম বাড়াচ্ছে। যখন বাজারে পণ্য থাকে না তখন কোম্পানিগুলোও পণ্য সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। বাজার অস্থির করে দেয়। এদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর তেমন কোন ব্যবস্থা না নিলেও আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীদের গিয়ে জরিমানা করে।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। বাজারে অভিযান চালালে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে। যার প্রমাণ আমরা আগেও পেয়েছি।’

সবশেষ ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আজকের এই মতবিনিময় সভায় যেসব বিষয়ে পরামর্শ এসেছে, সেসব বিষয়ে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখিত আকারে সুপারিশ করবো।’

এ সময় রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে সকলের সহযোগীতা চান তিনি।