নয় কার্যদিবস পর ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২৫ জুলাই) লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন দেখা দিলেও শেষপর্যন্ত মূল্যসূচক ও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছে লেনদেন। এর মাধ্যমে টানা নয় কার্যদিবস পতনের পর ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা পেলো শেয়ারবাজার।

এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনের শুরুতে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। লেনদেনের সময় আধাঘণ্টা না গড়াতেই প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।

এতে আবারও বড় দরপতনের আশঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে দুপুর ১২টার পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। দরপতনের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান। সেই ক্রেতা সংকট থেকে বেরিয়ে আসে শতাধিক প্রতিষ্ঠান। ফলে ঊর্ধ্বমুখী হয় সূচক।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঈদের পর থেকেই শেয়ারবাজার টানা দরপতন ঘটলেও সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর পর পতনের মাত্রা বেড়ে যায়। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জ্বালানি সাশ্রয়ে লক্ষ্যে সোমবার (১৮ জুলাই) সারাদেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং করা বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার।

সরকারের পক্ষ এমন ঘোষণা আসার পর সোমবার শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। সেইসঙ্গে চরম ক্রেতা সংকটে পড়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। মঙ্গলবারও (১৯ জুলাই) শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ক্রেতা সংকট দেখা দেয়। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়। পরের দুই কার্যদিবস বুধ ও বৃহস্পতিবার (২০ ও ২১ জুলাই) কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা ফেরায় দরপতনের মাত্র কিছুটা কমে। তবে পতনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শেয়ারবাজার। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আবারও ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়।

এ পরিস্থিতিতে আজ শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই ক্রেতা সংকটে পড়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান। ফলে লেনদেন শুরুর আধাঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫০ পয়েন্টের ওপরে পড়ে যায়। আর ক্রয়ে আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে প্রায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানের। দরপতনের তালিকায় নাম লেখায় ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের।

এমন পরিস্থিতিতে দুপুর ১২টার পর হঠাৎ করেই ঘুরে যায় বাজার পরিস্থিতি। আর শেষ ঘণ্টার লেনদেনে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের মোটামুটি বড় উত্থান দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৯৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩১টির এবং ৫৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৮২ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৭৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি বাজারটিতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৬৩৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৭০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৬৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৫ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সেসরিজের ২৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মতিন স্পিনিং।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে— তিতাস গ্যাস, সোনালী পেপার, এইচ আর টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, শাহিনপুকুর সিরামিকস, ফরচুন সুজ এবং রবি।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১১৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৪৬ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৯টির এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।