ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে পালালেন নবাবপুরের ফ্যান ব্যবসায়ীরা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: অতিরিক্ত গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এর মাঝে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। জীবনে কিছুটা স্বস্তি পেতে চার্জার ফ্যানের খোঁজে রাজধানীসহ সারাদেশের দোকানগুলোতে ভিড় করছেন মানুষ। সেখানেও শান্তি নেই। চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের গলা কাটছে সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ীরা।

পাইকারী বাজারে গত কয়েক দিন আগে একটি ১৬ ইঞ্জি চার্জার ফ্যানের দাম দুই হাজার ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হলেও এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেই চার্জার ফ্যানের দাম নেওয়া হচ্ছে ছয় হাজার ৫০০ টাকা। প্রতিটি ফ্যানে সুযোগ বুঝে পাইকারী দোকানেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে চার হাজার ৫০ টাকা। এরপর সেই চার্জার ফ্যান খুচরা পর্যায়ে হয়ে যাচ্ছে নয় থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

চার্জার ফ্যান নিয়ে এমন হরিলুট হাতেনাতে ধরেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে চার্জার ফ্যানের বাজারের অনিয়ম ধরতে অভিযানে নামে সরকারের এই সংস্থাটি। রাজধানীতেই এই সংস্থাটির তিনটি টিম কাজ করে।

চার্জার ফ্যানের ইম্পোটারদের বেশির ভাগই রাজধানীর নবাবপুরের। সেখানে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিদপ্তর। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (তদন্ত) মো. আসিফ আল আজাদ।

ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের খবরে দোকান বন্ধ করে পালাতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মধ্যে ন্যাশনাল ফ্যান হাউজের মালিক দোকান বন্ধ করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে অন্ধকার ঘরে বসেছিলেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পুলিশের সাহায্যে তালা খুলে দোকানের সাটার খুলতেই দেখা যায়, অন্ধকার রুমে বসে আছেন ন্যাশনাল ফ্যান হাউজের মালিক। এই গরমে এভাবে অন্ধকার রুমে তাকে বসে থাকতে দেখে অবাক ভোক্তা কর্মকর্তারা।

অভিযানে দেখা যায়, ন্যাশনাল ফ্যান হাউজের নেই কোনো ক্রয় রশিদ, নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে চার্জার ফ্যান বিক্রি করছেন তারা।

তবে দোকান বন্ধ রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভয় পেয়ে দোকান বন্ধ করেছেন।’

নিজের দোষ স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘শুধু তিনি নন, নবাবপুরের সকল ইম্পোটাররা দাম বাড়িয়ে চার্জার ফ্যান বিক্রি করছেন।’

পরে আরও একটি মার্কেটের মিডিয়া হোম অ্যাপ্লায়েন্স নামের প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির দরজায় লেখা রয়েছে- ‘চার্জার ফ্যান নেই’। তারপরও আগ্রহ নিয়ে ভেতরে যান ভোক্তা কর্মকর্তারা। দোকানের বিগত কয়েক মাসের বিক্রয় রশিদ দেখে চোক কপালে ওঠার মতো অবস্থা। গত ১১ ফেব্রুয়ার একটি ১৬ ইঞ্জি চার্জার ফ্যান পাইকারী দুই হাজার ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। একই ফ্যান গত ০৪ জুন বিক্রি করা হয়েছে ছয় হাজার ২০০ টাকা।

অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘দেশব্যাপী একযোগে চার্জার ফ্যানের উপর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর নবাবপুর রোডের ইম্পোটার বিশেষ করে পাইকারী দোকানগুলোতে আমরা তদারকি করে দেখলাম। অনৈতিক ভাবে চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১৬ ইঞ্জির একটি চার্জার ফ্যান পাইকারী বিক্রি করা হয়েছে দুই হাজার ৪৫০ টাকা। একই ফ্যান ০৪ জুন বিক্রি করা হয়েছে ছয় হাজার ২০০ টাকা। এমনকি আমরা পেয়েছি ছয় হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘যার কাছ থেকে ফ্যান ক্রয় করেছেন তাদের কোনো ক্রয় রশিদ নেই। বা দেখাতে চাচ্ছেন না। কারণ তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়ে যাবে। এছাড়া অনেক রশিদে দেখলাম চার্জার ফ্যানের নাম লেখা থাকলেও বিক্রয় মূল্য লেখা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অভিযানে আসার আগেই অনেকে দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু দোকানের ভেতরে তারা অবস্থান করছেন।’

আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের স্পষ্ট মেসেজ যারা অনৈতিক ভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে মুনাফা লাভ করবে তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আগামী কয়েকদিন এই অভিযান চলবে। অভিযান আরও জোড়দার করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে ন্যাশনাল ফ্যান হাউজ এবং মিডিয়া হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ করে মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

এছাড়া, রাজধানীর বায়তুল মোকারম মার্কেট এলাকায় অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মাসুম আরেফিন, সহকারী পরিচালক মাগফুর রহমান।

স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় অভিযানের নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক (অভিযোগ শাখা) মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান ও রোজিনা সুলতানা।

-এসআর

Related posts:

জরুরী চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশন, রক্ত পরীক্ষার রি-এজেন্ট সবই মেয়াদোত্তীর্ণ
লবণের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ভোক্তা অধিদপ্তরের বিশেষ তদারকি
প্রতারণার প্রমান পেয়ে স্যামসাং ও ইলেক্ট্রাকে ভোক্তা অধিদপ্তরের জরিমানা
ফার্মেসী ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিদপ্তরের তদারকি
শিশুখাদ্যে ভেজাল রোধে বিশেষ অভিযান শুরু আগামী সপ্তাহে
আদার মূল্য কারসাজি করার অপরাধে ৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
বাড়তি দামে টিসিবি পণ্য
ফ্রিজে এক সঙ্গে কেক-মাংস খোলা অবস্থায় সংরক্ষণ: জরিমানা ২ লাখ
১৪৩ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, চলছে নিয়মিত বাজার তদারকি
শ্রীনগরে ৪ হাজার লিটার সয়াবিন তেলের অবৈধ মজুদ, লাখ টাকা জরিমানা